রাজন ভট্টাচার্য ॥ অর্থনৈতিক ও সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুলছে সম্ভাবনার দ্বার। বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক করিডরে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের আটটি মহাসড়কের প্রতিটি হবে চার থেকে ছয় লেন পর্যন্ত। ২০১৮ সালে এর কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৬০০ কিলোমিটার মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে এই হাইওয়ের সঙ্গে। এশিয়ান হাইওয়ের মূল সংযোগটি যাবে চট্টগ্রাম দিয়ে। তবে তামাবিল দিয়েও একটি পথ যুক্ত হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। নবেম্বরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্টের এই টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে। এদিকে এই করিডরে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক মানের সড়ক না থাকা।
২০০৯ সালের ১০ আগস্ট এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে ‘দ্য ইন্টারগবর্নমেন্টাল এগ্রিমেন্ট অন দ্য এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক’ পক্ষভুক্ত হয়। ওই সময়ে একটি রুটকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা হয় এশিয়ান হাইওয়ের নক্সা। নানা জটিলতায় ওই নক্সা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর পরও সংশ্লিষ্ট জাতীয় সড়কগুলো দুর্বল হওয়ায় চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে প্রকল্পটি দ্রুত হাতে নেয়া হচ্ছে। বিশ্বের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন অঞ্চলসমূহের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। এমন বাস্তবতায় বিশ্ব বাণিজ্যের তুলনায় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য তুলনামূলক কম। এ লক্ষ্যে মুক্তবাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগের প্রসার ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নক্সা প্রণয়নে অর্থ অনুমোদন ॥ এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে দেশের যেসব সড়ক যুক্ত হবে সেগুলোর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও ডিটেইল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নক্সা প্রণয়নের জন্য ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে কাজটি আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ প্রসঙ্গে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, নক্সা প্রণয়নের জন্য যদি ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করে তাহলে পরিষ্কারভাবে আমরা বলতে পারি আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। নক্সা ও ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শেষ হলেই নানা প্রকল্প হাতে নিতে পারব। চার দেশের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণে অনেক উন্নয়ন সহযোগী আসতে চাচ্ছেন বলেও মত দেন তিনি।
এমএন সিদ্দিক আরও বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো ফোর লেনে নিয়ে যাব। ইতোমধ্যেই ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাশে এ্যাপ্রোচ সড়ক ফোর লেনে উন্নীত করতে যাচ্ছি। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, রংপুরের বুড়িমারী পর্যন্ত ২৯৫ কিলোমিটার সড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ কাজ আগেই শুরু হয়ে গেছে। বাকি সড়কগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ফোর লেনে নেয়া হবে।
কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ৬০০ কিলোমিটার ফোর লেনে নিয়ে যাওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে নক্সার কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ফোর লেন হবে। এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডরে (বিসিআইএম) এই নক্সা করা হবে। দুই লেন থেকে চার লেন এমনকি স্থান ভেদে ছয় লেনেও রূপান্তর করা হবে সড়কগুলো।
দ্বার খুলবে ২০১৮ সালের পর ॥ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জানা যায়, টেকনিক্যাল এ্যাসিসটেন্স ফর সাব-রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপ্যারেটরি ফ্যাসিলিটির আওতায় নক্সা প্রণয়ন করা হবে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এতে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সাল নাগাদ। এর আওতায় ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিটেইল্ড ডিজাইন করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ বাবদ ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় বেঁধে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় ৪৪৪ জন পরামর্শক, ৭ জন পৃথক দেশীয় পরামর্শক নিয়োগ, যানবাহন ক্রয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য বেতন, অফিস এ্যাকোমোডেশন, জ্বালানি, স্টাফ আউটসোর্সিং, কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জাম কেনা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া অফিস ভাড়া, যানবাহন খরচ, ইন্টারনেট বিল বাবদ এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ফ্রান্স অর্থায়ন করতে চেয়েছে। এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়ক উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া।
আট করিডর যুক্ত হচ্ছে ॥ এশিয়ান হাইওয়েতে যে আটটি মহাসড়ক যুক্ত হচ্ছে তার মধ্যে প্রথমে রয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল, যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারত। প্রথম করিডরের দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এই রুট ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দ্বিতীয় করিডর : রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ। এর মোট দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডরটি অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কাজ করবে। তৃতীয় করিডর : এর মোট দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ কিলোমিটার। এটি দক্ষিণের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া-পায়রাবন্দর হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। এটিও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগে অবদান রাখবে। চতুর্থ করিডর : এই রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার। সিলেটের চরখাই-শেওলা-সূত্রাকান্দি হয়ে ভারতে প্রবেশ। পঞ্চম করিডর : এটি চট্টগ্রাম এ্যাকসেস রোড। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ কিলোমিটার। এই করিডরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রসার ঘটবে। ষষ্ঠ করিডর : এই রুটটি হচ্ছে সাভার নবীনগর থেকে পাটুরিয়া রোড পর্যন্ত। যার মোট দৈর্ঘ্য ৫৮ কিলোমিটার। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক প্রসারে অন্যান্য করিডরের রুটকে সহায়তা করাই অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে সরাসরি এই রুটটি অন্য দেশের সঙ্গে যুক্ত নয়।
সপ্তম করিডর : এই রুটের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এটি নাটোর বনপড়া-ঈশ্বরদী-পাকশী-কুষ্টিয়া হয়ে ঝিনাইদহে মিলিত হয়েছে। এটিও অন্যান্য রুটের সহায়ক হিসেবে আঞ্চলিক যোগাযোগে অবদান রাখবে। অষ্টম করিডর : এর মোট দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। এটি রংপুরের পাগলাপীর-ধালীয়া-বারখাতা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এই করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত হবে।
নবেম্বর থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু ॥ এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বাংলাদেশ অংশের ২ কিলোমিটার বিচ্ছিন্ন অংশের কাজ নবেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। বালুখালীগুন্দুম ২ কিলোমিটার বিচ্ছিন্ন অংশের রাস্তা নির্মাণের মধ্য দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চলেছে বাংলাদেশ।
৪ লেনের এই সড়কটি নির্মাণ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এই কাজটি বাস্তবায়ন করবে। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এই ২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হাইওয়ে প্রসঙ্গে বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের কাজ সম্পন্ন হলে এই সড়ক দিয়ে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড ও চীনের কুনমিং পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা পাবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন বৃদ্ধি পাবে। এই অঞ্চলের আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগের নবদিগন্তের সূচনা করবে।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ শেষ হবে ২০২০ সালে ॥ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। নবেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ডিসেম্বরে টানেলের ভৌত অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন, এশিয়ান হাইওয়ের মুখ তামাবিল দিয়ে যুক্ত হবে। এটা আসলে অপপ্রচার। এশিয়ান হাইওয়ের মূল সংযোগটি যাবে চট্টগ্রাম দিয়ে। মন্ত্রী বলেন, টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২০ সালে। কিন্তু ২০১৯ সালের মধ্যেও প্রকল্পটি শেষ হতে পারে। কারণ, চীনের যে প্রতিষ্ঠান কাজটি করবে তারা দক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। চীন দেবে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বাকি টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ।
সড়কের মানই প্রধান চ্যালেঞ্জ ॥ এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক মানের সড়ক। এদিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবুও আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে চার দেশের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।
একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হয়েছে, এশিয়ান হাইওয়ের তিনটি রুট গেছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। এর মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক ও একটি আঞ্চলিক। বাংলাদেশ অংশে এ তিন রুটে সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৪১ কিলোমিটার, যার প্রায় পুরোটাই নিম্নমানের। এক কিলোমিটারও নেই এশিয়ান হাইওয়ে মানের সড়ক।
ইউএন-এসকাপ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘এশিয়ান হাইওয়ে ডাটাবেজ’-এ এসব তথ্য তুলে ধরেছে। এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত দেশগুলোর কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেছে তারা। বাংলাদেশের সড়কগুলোর ব্যাপারে ইউএন-এসকাপ বলেছে, গত পাঁচ বছরেও এগুলো উন্নয়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের যে দুটি আন্তর্জাতিক রুট অতিক্রম করেছে তা হলো, এএইচ-১ ও এএইচ-২। আঞ্চলিক রুটটি হলো এএইচ-৪১। এশিয়ান হাইওয়ে মানের সড়ক মূলত ‘প্রাইমারী বা ধমনি সড়ক’ নামে পরিচিত। এগুলোয় প্রবেশ থাকে সংরক্ষিত। অযান্ত্রিক ও ধীরগতির যানবাহন এতে প্রবেশ করতে পারে না। এগুলোর জন্য পৃথক সার্ভিস সড়কও থাকে। প্রাইমারী সড়কের দুই পাশে থাকে নিরাপত্তামূলক বেষ্টনী বা সীমানা প্রাচীর, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলতে পারে। ন্যূনতম চার লেনের এসব সড়কে কোন মোড় থাকার সুযোগ নেই। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে ন্যূনতম ৫০ মিটারের মধ্যে কোন জনবসতি বা স্থাপনা রাখা যাবে না। সর্বোপরি এক কিলোমিটার অন্তর উল্লেখ থাকবে পরবর্তী জেলার নাম ও দূরত্ব। এসব সড়কের পাশ দিয়ে পথচারী চলাচল বা আড়াআড়ি সড়ক পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ইউএন-এসকাপ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলছে, প্রাইমারী সড়কের শর্ত পূরণ হয়, এমন কোন সড়ক-মহাসড়ক বাংলাদেশে নেই। মূলত এক্সপ্রেসওয়েগুলো প্রাইমারী সড়ক হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন এক্সপ্রেসওয়ে নেই। এশিয়ান হাইওয়ের রুটভুক্ত ১ হাজার ৭৪১ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ৭২ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের। এগুলো প্রথম শ্রেণীর আওতাভুক্ত। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে, এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়ক উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডও সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো দ্রুত উন্নয়ন করছে। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক করিডরে যুক্ত হওয়ার জন্য দ্রুত মহাসড়কগুলো উন্নত করছে। পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান এমনকি মিয়ানমারও এ্যাকসেস কন্ট্রোলড (প্রবেশ সংরক্ষিত) সড়ক নির্মাণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন একটি সড়কও নেই। চার লেনের কিছু সড়ক থাকলেও সেগুলোয় দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল, নসিমন, করিমন চলছে। এশিয়ান হাইওয়ের রুটভুক্ত প্রতিটি মহাসড়কেরই একই অবস্থা। এগুলোর উন্নয়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনও নেয়া হয়নি। সম্প্রতি দেশের ২২ মহাসড়কে অযান্ত্রিক পরিবহনসহ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, নসিমন, করিমন ও ভটভটি সরকারীভাবে চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।