ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

’২১ সালের আগেই দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট সুবিধা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

’২১ সালের আগেই দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট  সুবিধা

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানী থেকে গ্রাম, কোথাও বাদ থাকবে না। ভিশন ’২১ এর আগেই ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশের অভ্যন্তরের এই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলোও একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি তৈরি করতে না পারলে গ্রামের মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। শহর ও গ্রামের পার্থক্য দূর করতে হলে ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন ছাড়া বিকল্প নেই। এ কারণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন। সরকার রূপকল্প-’২১ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। ভিশন ’২১-কে বাস্তব রূপ দিতে সবার আগে দরকার গোটা দেশে কানেক্টিভিটি। দু’টি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে কানেক্টিভিটি তৈরির জন্য। অপারেটর দুটো হচ্ছে ফাইবার এট হোম লিমিটেড ও সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। সরকারী কোম্পানি হিসেবে বিটিসিএল কেবল স্থাপনের কাজ করছে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, ফাইবার এট হোম ১৭ হাজার কিলোমিটার ও সামিট কমিউনিকেশন্স ১৭ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। তবে সামিট আন্ডারগ্রাউন্ডে মাত্র ৮১০ কি.মি. কেবল স্থাপন করেছে। বাকি ১৭ হাজার ৭৭ কিলোমিটার ওভারহেড কেবল স্থাপন করেছে। বিটিসিএল ৬ হাজার কিলোমিটার, পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড) কেবল স্থাপন করেছে ৩ হাজার ৩১৪, গ্রামীণফোন ২ হাজার ৭৩০, বাংলালিংক ৩ হাজার ১১২, রবি ৫৯২, এয়ারটেল ২৯৮, সিটিসেল এক হাজার ১৯৩ ও টেলিটক ১৬০ কি.মি. কেবল স্থাপন করেছে। মোট ৪৭ হাজার ৮৬৭ কি.মি. কেবল স্থাপন শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গোটা দেশকে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের আওতায় নিয়ে আসার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, তথ্য প্রযুক্তিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে পারলে শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চল একই তথ্য বাতায়নে অবস্থান করবে। তথ্য প্রযুক্তি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে হলে ইনফরমেশন হাইওয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজন সামনে রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এনটিটিএন লাইসেন্স প্রাপ্ত হয় ফাইবার এট হোম লিমিটেড। এনটিটিএন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রথম পদক্ষেপ। এনটিটিএন হচ্ছে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক। তথ্য প্রযুক্তিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি কমন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গঠনে সরকার এনটিটিএনকে লাইসেন্স দেয়। এনটিটিএন গাইড লাইন অনুযায়ী এনটিটিএন অপারেটর ছাড়া অন্য কেউ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা ও উন্নয়ন করতে পারবে না। এনটিটিএন গাইড লাইন অনুসারে প্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত দেয়া হয়। শর্ত পূরণ না করতে পারলে ১০ (দশ) কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি তারা পাবে না। শর্তানুয়ায়ী প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক উপজেলায় তাদের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে এবং ১০ (দশ) বছরের মধ্যে দেশের সব উপজেলায় পৌঁছাতে হবে। ফাইবার এট হোম লিমিটেড সরকারের এই বাধ্যবাধকতা দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করছে। ইতোমধ্যে তারা সরকারের পাঁচ বছরের টার্গেট পূরণ করেছে। বর্তমানে ফাইবার এট হোম লিমিটেড সারাদেশে ১৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। নেটওয়ার্কটি আবার রিডানড্যান্ট পাত দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। যাতে গ্রাহকদেরকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করা যায়। ফাইবার এট হোম লিমিটেড ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় ২ হাজার কি. মি. ম্যাশ ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এ ছাড়া মতিঝিল, মহাখালী ডিওএইচএস ও নিকেতনের প্রতিটি ভবনে অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। নেটওয়ার্কে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে দেশের তথ্য প্রযুক্তির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এনটিটিএন অপারেটরদের লাইসেন্সের শর্তানুসারে এনটিটিএন অপারেটররা এন্ড-ইউজার পর্যন্ত শুধু ট্রান্সমিশন সেবা প্রদান করতে পারবে এবং তারা কোন টেলিকমিউনিকেশন সেবা প্রদান করতে পারবে না। বিটিআরসি থেকে যে কোন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটর এনটিটিএন অপারেটরদের কাছ থেকে ট্রান্সমিশন সেবা নিতে পারবে। এনটিটিএন লাইসেন্স আসার পর অন্যান্য অপারেটরের খরচ শতকরা ৪০ ভাগ কমে গেছে। এ কারণে ব্যান্ডউইথের দাম ২০ গুণ কমেছে। বর্তমানে থ্রি-জি প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ মূল্য ২ শ’ টাকার নিচে এনটিটিএন অপারেটররা বিক্রি করছে। ফাইবার এট হোম লিমিটেডের হেড অব পাবলিক রিলেশন এ্যান্ড গবঃ এ্যাফেয়ার্স আব্বাস ফারুক বলেন, যদি বিভিন্ন বাধা দূর করা যায় তাহলে ট্রান্সমিশন ব্যবসার ভবিষ্যত ভাল হবে। এনটিটিএন ব্যবসার উপরই ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প অনেকাংশে নির্ভরশীল। এনটিটিএন অপারেটরাই বিশেষ করে ফাইবার এট হোম লিমিটেড তথ্য প্রযুক্তিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর মাধ্যমে, ই-ব্যাংকিং, ই-এডুকেশন ও ই- গবর্নমেন্ট , ই-এগ্রিকালচার প্রভৃতি সেবা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এনটিটিএন নেটওয়ার্কের ফলেই সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পেতে পারে দেশের জনগণ। এনটিটিএন অপারেটরদের প্রতিটি উপজেলায় যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাই সমভাবে সারাদেশে একটি নিরবচ্ছিন্ন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে ফাইবার এট হোম ৬১ জেলার ২৭৮ উপজেলায় তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে। তাদের লক্ষ্য আগামী ২ বছরের মধ্যেই সমস্ত উপজেলায় পৌঁছে যাওয়া। তা ছাড়া ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ইউনিয়ন পর্যায়েও নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করবে ফাইবার এট হোম লিমিটেড। বর্তমানে ফাইবার এট হোম লিমিটেডের গ্রাহক সেবা গ্রহণ করছেন সকল মোবাইল ফোন অপারেটর, ওয়াইম্যাক্স অপারেটর, আইএসপি অপারেটর, গেটওয়ে অপারেটর এবং কেবল অপারেটররা। সরকারের ইনফো-সরকার-২ ফেজে ফাইবার এট হোমের নেটওয়ার্ক সরকারী অফিসগুলোর কানেক্টিভিটিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। বাংলা গবঃ প্রজেক্টেও ফাইবার এট হোম লিমিটেডের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। ইনফো-সরকার-৩ প্রজেক্ট সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে।
×