ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

মাদ্রাসার কমিটির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জেলা প্রশাসককে শোকজ

নিজস্বসংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ 

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

মাদ্রাসার কমিটির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জেলা প্রশাসককে শোকজ

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

ময়মনসিংহের একটি মাদরাসার এডহক কমিটি নিয়ে বিতর্ক গড়িয়েছে আদালতে। মামলার পর কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে কমিটির সভাপতি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমকে শোকজ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ সদরের কাতলাসেন গ্রামে অবস্থিত কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসার কমিটি নিয়ে এ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কে হবেন এ নিয়ে দ্বন্দ্বে সূত্রপাত। ৫ সদস্যের কমিটির অন্যরা হলেন, বিদ্যোৎসাহী সদস্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন, শিক্ষক প্রতিনিধির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খন্দকার মাহবুবুল আলম ও কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসার সদস্যসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন।

অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, কাদির বক্স সরকার ১৮৯০ সালে কাদেরিয়া কামিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামেই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি মাদরাসাটির একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রথম প্রজন্মের সবাই ও দ্বিতীয় প্রজন্মের দুজন ছাড়া বাকিরা মৃত্যুবরণ করেছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের অনেক ব্যক্তিই জীবিত। আতাউর রহমান নামের এক ব্যক্তি কাদির বক্স সরকারের প্রপৌত্র। আতাউর রহমান মাদরাসাটির একমাত্র দাতা এবং আজীবন দাতা। আতাউর রহমান ২০০৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মাদরাসাটির অনুমোদিত সব গভর্নিং বডির দাতা সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মাদরাসাটির অনুমোদিত সকল গভর্নিং বডিতে মৃত্যুজনিত কারণে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যপদ শূন্য ছিল।

২০২৩ সালের আগে কামিল মাদরাসায় প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যুতে তার উত্তরাধিকারদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার বিধান ছিল না। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডি সংক্রান্ত সংবিধি-২০২৩ এর ২৬ নম্বর ধারায় সর্বপ্রথম কোন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারদের মধ্য থেকে তাদের মনোনীত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে গণ্য হওয়ার বিধান করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি-২০২৩ এর সুস্পষ্ট ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে শেরপুর জেলা শহরের শিববাড়ী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা খন্দকার মাহবুবুল আলম নামের একজনের নাম লিখে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব জমা দেন। আতাউর রহমান অধ্যক্ষের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে বিধি অনুযায়ী এডহক কমিটিতে দাতাকে সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কয়েকবার আবেদন করেন।

এই বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করা হলেও জেলা প্রশাসক সংবিধি-২০২৩ এর ২৬ নম্বর ধারা অমান্য করে খন্দকার মাহবুবুল আলমকে এডহক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মনোনীত করেছেন। এই বিষয়গুলো বারবার অবগত করা হয়েছে এবং চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি নিয়ম অনুযায়ী কমপ্লেইন ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি অনুসরণ না করে সূত্রস্থ স্মারকে খন্দকার মাহবুবুল আলমকে এডহক কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করে ৫ সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করে। অথচ খন্দকার মাহবুবুল আলম মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার জন্য কখনো কোনো টাকা দান করেননি। তার নাম কখনো মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা তালিকায় ছিল না এবং সে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের উত্তরাধিকারীও না।
হাইকোর্টে মামলার বাদী ও নিজেকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আজীবন দাতা সদস্য দাবি করে আতাউর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন ছুটি না নিয়েই প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো স্থানে চলে যান। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ লোক। এ নিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে ৩ হাজার টাকা কমপ্লেইন ফি জমা দিয়ে একটি আবেদন করা হলেও ফলাফল শূন্য।

তিনি বলেন, অবৈধ পন্থায় খন্দকার মাহবুবুল আলম নামের একজনকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা করেছিলাম। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল নিশি জারি করেছেন। এছাড়া এ কে এম সাইদুর রহমান নামের আরেকজন ময়মনসিংহের আদালতে মামলা করেছিলেন। ময়মনসিংহের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক গত ২৩ এপ্রিল কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাসহ জেলা প্রশাসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।

এডহক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খন্দকার মাহবুবুল আলম বলেন, বৈধ পন্থায় আমাকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে। তবুও আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এছাড়া আমি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে অংশগ্রহণও করি না। কারণ, আমি শেরপুর থাকি।

তবে কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, অনৈতিক পন্থায় খন্দকার মাহবুবুল আলমকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়নি। আমি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত না। ছুটি না নিয়ে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিও সত্য নয়।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। আদালত শুধু উনাকেই শোকজ করেছে। কমিটির কার্যক্রম বন্ধের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত বলেন, এডহক কমিটিতে খন্দকার মাহবুবুল আলম নামের একজনকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করায় আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়টি অনেক আগেই জানতে পেরেছি। কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আদালত অস্থায়ী নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি আছে কিনা খোঁজ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, আদালতে মামলা করায় আমাকে শোকজ করা হয়েছিল। আমি ইতোমধ্যে এর জবাব দিয়েছি।

 

শেখ আব্দুল আওয়াল / ফারুক

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার