
ছবি: সংগৃহীত
কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তা নদীর বৈরালীসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় এ অঞ্চলের নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়তো বৈরালী সহ রুই কাতলা টেংরা সহ বিভিন্ন মাছ। তবে সবচেয়ে বেশি ধারা পড়তো বৈরালী মাছ। আজ তা বিলুপ্তির পথে। ২০১৫ সালে বৈরালী মাছটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা আই ইউ সি এম। তবে স্থানীয় মৎস্য গবেষকরা দীর্ঘদিন বৈরালী মাছের গবেষণার পর পুকুরে সফল ভাবে প্রজনন করতে সক্ষম হয়েছে।
ধরলা ও তিস্তা নদীতে প্রতিবছর শীত ও গ্রীষ্মের সময় সামান্য পরিমাণে বৈরালী সহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে একদম পাওয়া যায় না। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার ১৬াট নদ-নদীতে বৈরালী রুই কাতলা টেংরা, নাড়োয়া বালিয়া,বাইম,কাজলী রুই বোয়াল মাছ পাওয়া যায় তাও পরিমাণে অনেক কম।
কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা ও ধরলা নদীতে কয়েকশ জেলে প্রতিদিন জাল ফেলে কয়েকবার টানলেও আশানুরূপ বৈরালী সহ দেশী কোন মাছ পাওয়া যায় না। যে টুকু মাছ পাওয়া যায় তাও চড়া দামে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি বৈরালী মাছ ৬শ থেকে ৭শ টাকা দরে বিক্রি হয় অন্যান্য মাছ সাইজ ভেদে ৮শ থেকে প্রতিকেজি ১ হাজারার টাকায় বিক্রি হয়। ধরলা ও তিস্তা নদীতে যতটুকু বৈরালী সহ বিভিন্ন মাছ এখনও আছে তাও হুমকির মুখে। কারণ আধুনিক পদ্ধতিতে নদীতে ব্যাটারি ফেলে কারেন্ট শক দিয়ে মাছ ধরছে জেলেরা। এতে মাছের ডিম সহ পোনা মাছ গুলো মারা যায় প্রতিনিয়ত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বৈরালী সহ নদীর মাছ ব্যাটারি পদ্ধতির কারণে আর কোনো মাছ পাবে না। এ ছাড়া উজানে একাধিক জায়গায় বাঁধ দেয়ার কারণে, নদ-নদী গুলোতে পানির সরবরাহ কমে যাওয়া ও মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার, কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা স্বীকারসহ অভয় আশ্রম থেকে মা মাছ স্বীকারের ফলে আজ বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু বৈরালীসহ দেশীয় মাছ।
জেলে শফিকুল (৩৫) ও অমুল্য জানান এক সময় ধরলা ও তিস্তা নদীতে প্রচুর বৈরালী সহ রুই কাতলা টেংরা বোয়াল সহ বিভিন্ন পাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে সারাদিনে জাল টেনে এক কেজিও মাছ পাওয়া যায় না।চরম কষ্ট হয় আমাদের। কিন্তু আমাদের উপায় নেই। এখন নতুন করে অন্য পেশায় যেতে পারি না। তাদের মতে বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে উঠায় ও পানি শুকিয়ে যাবার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম মাছ বাজারের ক্রেতা হামিদুল ও ময়েজ আলী জানান বৈরালী মাছ সহ বিভিন্ন নদীর মাছ প্রতিদিন বাজারে উঠে না। যদিও মাঝে মধ্যে বাজারে ছোট বৈরালী উঠলেও প্রচুর দাম। প্রতিকেজি মাছ ৫৫০ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর অন্যান্য রুই কাতলা মাছের দাম প্রতিকেজি ৮শ থেকে ১হাজার টাকা।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মোক্তাদির খান জানান বৈরালী সহ রুই কাতলাসহ বিভিন্ন মাছ এ অঞ্চলের প্রকৃতিগত মাছ। ধরলা ও তিস্তা নদীতে এই মাছগুলি প্রচুর পাওয়া যেতো এক সময়। কিন্তু বর্তমানে উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদীর নব্যতা কম, নদী দূষণ এর কারণে বিভিন্ন মাছের প্রজনন কমে গেছে। ফলে নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
ফারুক