
মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে তমা রানী গৌরী (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্রী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলি ধারারপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তমা ওই গ্রামের নৃপেন্দ্র নাথের মেয়ে ও চাঁদেরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী।
এলাকাবাসী জানায় মোবাইলে চার্জ দেয়া অবস্থায় মেয়েটি কথা বলছিল। হঠাৎই মোবাইলটি বিস্ফোরিত হয় ও তার মুখমন্ডল এবং চুলে আগুন ধরে যায়। পরিবারের লোকজন সহ এলাকাবাসী তাকে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নীলফামারী থানার ওসি এম আর সাঈদ জানান, মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে সুরতহাল করা হচ্ছে। মেয়েটির পরিবার ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ সৎ কারের আবেদন করেছেন। আমরা দ্রুত ঘটনাটি তদন্ত করছি। বিস্ফোরিত মোবাইলটি আলামত হিসাবে সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তে কোন অনিয়ম না পেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে এ ঘটনা সচেতন মহল মন্তব্য করে বলছেন চার্জে রেখে কথা বলার সময় মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার এর আগেও পাওয়া গেছে। তবু বিষয়টিতে সর্তক হচ্ছেন না অনেকে। মূলত প্রাত্যহিক জীবনে মোবাইল ছাড়া যেন চলে না এক মুহূর্ত। তাই খানিকটা বিরতি দিয়ে মোবাইলকে চার্জ দেয়ার ফুরসত মিলছে না কারও কারও। তবে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন।
মোবাইল ফোন কেন বিস্ফোরিত হয়? এই প্রশ্নের জবাবে একটি মোবাইল ফোন কোম্পনি কোয়ালিটি কন্ট্রোলার কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাধারণত আমরা যে রিপোর্টগুলো পাই, তা হলো, মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া অবস্থায় কথা বলার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। আর বিস্ফোরিত হয় ব্যাটারি। কারণ মোবাইল ফোনে ব্যাটারিই একমাত্র বিস্ফোরকের মতো। মোবাইল ফোনের ব্যাটারি যখন চার্জ হয় সে পাওয়ার কনজিউম করে। একই সময়ে যদি ওই ফোন দিয়ে কথাও বলা হয় তাহলে পাওয়ার কনজাম্পেশন আরো বেড়ে যায়। ফলে ব্যাটারি সাধারণ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয় এবং বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, এর বাইরে আমরা মনে করি সাধারণত তিন কারণে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হতে পারে। ম্যাটেরিয়াল, কন্ট্রোল এবং শর্টসার্কিট। প্রথমত, ব্যাটারি যদি নিম্নমানের হয় তাহলে চার্জের সময় সে প্রচুর হিট কনজিউম করে গরম হয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাটারিতে টেম্পারেচার কন্ট্রোল সার্কিটসহ আরো কিছু সার্কিট এবং কন্ট্রোল মোড ব্যবহার করা হয়। এগুলো যদি ঠিকভাবে কার্যকর না থাকে তাহলেও বিস্ফোরিত হতে পারে। আর তৃতীয়ত, যেসব ব্যাটারি হ্যান্ড সেট থেকে খোলা যায়না সেসব ব্যাটারি নানা কারণে ব্যাটারির কানেকশন পয়েন্টে শর্টসার্কিট হয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে।' তার মতে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণের এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বেই ঘটছে।
তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত তানভীর জোহা বলেন এই বিস্ফোরণের ঘটনা শুধু মোবাইল ফোন নয়, ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। তিনি বলেন, চার্জারে কানেকশন দিয়ে একই সঙ্গে কথা বলা বা অনলাইনে কাজ করলে মাদার বোর্ড, আইসি প্রভৃতি দিক দিয়ে অনেক বেশি তাপ উৎপাদন হবে। তখন প্রচন্ড তাপে বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।'' এই বিস্ফোরণের সময় পুরো ডিভাইসটিই শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরকে পরিণত হয়। বেশিরভাগ বিস্ফোরণ যেহেতু কথা বলার সময় হয় তাই মুখমন্ডলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এটা চার্জ দেয়ার সময় ছাড়াও বিস্ফোরিত হতে পারে।
মুমু