
সৈয়দপুর উপজেলার খড়খড়িয়া নদীতে নির্মিতব্য সুইচ গেট বদলে দিতে চলেছে দুই তীরের লাখ লাখ একর জমির কৃষির চিত্র। বছরব্যাপী সেচ সুবিধা নিশ্চিত হলে তিন ফসলি চাষ সম্ভব হবে এই অঞ্চলে, যা কৃষিতে এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খড়খড়িয়া নদীর উজানে স্বাভাবিক পানির উৎস না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের কৃত্রিম সেচের ওপর নির্ভর করতে হতো। এতে খরচ বাড়লেও উৎপাদন কম থাকায় অনেক জমিই অনাবাদি থেকে যেত। এই বাস্তবতা বদলাতে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নদীর ভাটিতে ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা কাঠামো।
সুন্দরপীর এলাকায় প্রায় ১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে তিনটি জলকপাট বিশিষ্ট একটি সেতু-সুইচ গেট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনসিই অ্যান্ড মাম জেভি-রংপুর ২০২৪ সালের মার্চে কাজ শুরু করে। নানা কারণে কাজ বিলম্ব হলেও বর্তমানে ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করে হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুইচ গেট চালু হলে উজানের ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ১০ ফুট উচ্চতায় পানি ধরে রাখা যাবে, যা সারা বছর সেচের কাজে ব্যবহৃত হবে। বর্ষায় গেট খুলে রাখা হবে, আর শুষ্ক মৌসুমে দিনাজপুরের সেচ খাল থেকে সংযুক্ত স্কেফের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। এতে খড়খড়িয়া নদী ও এর শাখা খালসহ প্রায় ২১ কিলোমিটার এলাকায় পানির প্রবাহ বজায় থাকবে।
এই প্রকল্পে প্রায় দুই লাখ একর জমি তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে শুধু উৎপাদনই বাড়বে না, জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থিতিশীল হবে এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারও কমবে। পাশাপাশি সেতু ও সুইচ গেট এলাকা পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করবে।
কৃষক তমিজ উদ্দিন (৪৬) বলেন, “এই সুইচ গেট আমাদের কৃষিকে পাল্টে দেবে। সারা বছর চাষাবাদ করতে পারবো।”
আবুল খায়ের (৫৯) বলেন, “আগে কখনও খড়া, কখনও বন্যার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হতো। এখন পরিকল্পিতভাবে কৃষি সম্ভব হবে।”
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভুষণ জানান, “নদীর পানিতে থাকা লতা-পাতা ও প্ল্যাংকটন জাতীয় উদ্ভিদ পচে প্রাকৃতিক সারে পরিণত হবে, যা ফসলের জন্য হবে আশীর্বাদস্বরূপ।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সৈয়দ মো. আমিনুর রশিদ বলেন, “এই প্রকল্প কৃষির পাশাপাশি সামগ্রিক উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনেও ভূমিকা রাখবে।”
নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, “সেচ সুবিধা নিশ্চিত হলে কৃষকদের উৎপাদন বাড়বে, খরচ কমবে, ফলে জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে।”
নুসরাত