
বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। ছেলেও হাল ছাড়েননি। রোজা রেখে পড়ালেখা করেছেন। অবশেষে চান্স পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই ভেঙে পড়েছে সব কিছু। চান্স পাওয়ার দিন রাতেই মারা যান বাবা। এখন ভর্তি হওয়া তো দূরের কথা, সংসার চালানোই হয়ে পড়েছে অসম্ভব।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দোলাটারী গ্রামের শিক্ষার্থী ময়নুল হক। দেশের বৃহৎ বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার এই তরুণ এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে এখন সেই স্বপ্নও ফিকে হয়ে এসেছে।
ময়নুলের বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন একটি ইটভাটার শ্রমিক। তার আয়ে চলে যেত পাঁচ সদস্যের পরিবার। ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ই তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার খরচ জোগাতে বিক্রি করতে হয়েছে দুটি গরু ও জমি। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। গত সপ্তাহেই মারা যান লুৎফর রহমান।
ময়নুল বলেন, “বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। আমিও ছাত্র পড়িয়ে আর দিনমজুরের কাজ করে নিজের পড়া চালিয়ে গেছি। ঢাকায় ভর্তি পরীক্ষার সময় অভাবে টানা এক মাস রোজা রেখেছিলাম। পরে বড় ভাইয়েরা জেনে কিছু সাহায্য করেন। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিটে ৩৫৮তম হয়ে সুযোগ পাই।”
২০২২ সালে গংগারহাট এমএএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এবং ২০২৪ সালে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ময়নুল। তিনি এখন চান, অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খরচটুকু যেন জোটে।
ভর্তির শেষ সময় ৫ মে। এর মধ্যে টাকার ব্যবস্থা না হলে হাতছাড়া হয়ে যাবে বহু কাঙ্ক্ষিত সুযোগ।
মা মায়া বেগম বলেন, “স্বামীর চিকিৎসার পেছনে যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ছেলের ভর্তির টাকা তো দূরের কথা, তিন ছেলেমেয়ের খাবার জোগাড় করাও কঠিন। সরকারের বা কোনো সহৃদয় মানুষের সহায়তা না পেলে কিছুই সম্ভব না।”
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, “আমি ময়নুলের বিষয়ে জানতাম না। তবে এখন বিষয়টি জেনেছি, খোঁজ নিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিচ্ছি।”
সহযোগিতা করতে চাইলে শিক্ষার্থী ময়নুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে এই নম্বরে: ০১৩১৮৯৬৯০৯৭।
মুমু