
বুনোহাতি
কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিবছরের মতো এবারও ধান পাকার মৌসুমে বুনোহাতির তা-ব শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে একদল ভারতীয় বুনোহাতি এসে রংছাতি ইউনিয়নের জাগিরপাড়া গ্রামে তা-ব চালিয়ে গেছে। খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসা হাতির দলটির তা-বে উঠতি বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত ও রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খান পাঠান খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ‘বেপরোয়া হাতির দলের ভয়ে গারো পাহাড়ের নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে ভারতের গারো পাহাড় থেকে ১৫-২০টি বুনোহাতি নেমে আসে। হাতির দলটি জাগিরপাড়া এলাকার ফসলি মাঠে নেমে বেশকিছু কাঁচা ও আধাপাকা জমির বোরোধান ক্ষতি করে। পরে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে টর্চলাইট, মশাল, বাদ্যবাজনা ও লাঠিসোঁটা দেখিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় হাতিগুলোকে পাহাড়ের দিকে তাড়াতে সক্ষম হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত সীমান্ত থেকে আসা ওই বুনোহাতির দলটি এখনো বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি পাহাড়ি জঙ্গলে বিচরণ করছে। যে কোনো সময় আবার লোকালয়ে নেমে আসতে পারে। এ কারণে জাগিরপাড়া ছাড়াও হাতিবেড়, চন্দ্রডিঙ্গা ও বেতগড়াসহ গারোপাহাড় লাগোয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গারো পাহাড় সংলগ্ন পাঁচগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ‘দিনের বেলায় হাতিগুলো গারো পাহাড়ের জঙ্গলে বিচরণ করে। রাতে খাবারের সন্ধানে ধানখেতে বা লোকালয়ে নেমে আসে। তবে ফসলের পাশাপাশি এরা ঘরবাড়ি এবং গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি করে। যেদিক দিয়ে যায়, সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায়। ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। অতীতের বিভিন্ন সময়ে এ এলাকায় বেশ কয়েকজন হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন।’
জাগিরপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, প্রতিবছরই বুনোহাতির দল আমাদের ফসল নষ্ট করে। এবারও ঠিকমতো ধান পাকার আগেই খেত নষ্ট করে দিয়ে গেল। স্থানীয় হাজং কমিউনিটির নেতা সুদীপ্ত হাজং বলেন, ‘হাতির দল যে খেতটি টার্গেট করবে সেটির ক্ষতি করবেই। বছরের পর বছর ধরে এ তা-ব চলছে। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি।
বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতির দলটি এর আগে শেরপুরের নালিতবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাতেও তা-ব চালায়। নিরুপায় হয়ে ওই এলাকার অনেকে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে নিতে বাধ্য হয়।