
ছবি : সংগৃহীত
ঢাকার পরিবহন খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পাতাল রেল, এমআরটি লাইন-ওয়ান। একসময় যা ছিল কেবল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ভাবনায় যে দ্রুতগতির নগর পরিবহনের স্বপ্ন লালিত হয়েছিল, তা এবার মূর্ত রূপ পাচ্ছে রাজধানীর বুকে। প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল কাসেম ভূঁইয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২০২৬ সালেই চালু হচ্ছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নির্মিত এমআরটি লাইন-ওয়ান।
প্রাথমিকভাবে তিনটি রুটে চলবে এই রেললাইন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১২টি স্টেশনে থেমে মাত্র ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে পৌঁছানো যাবে। একইভাবে নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এবং কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে যাত্রার সময় হবে ৩৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। এই পাতাল রেলে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
টানেল নির্মাণের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশে মাটির ১০ থেকে ১৩ মিটার গভীরে টানেল খোঁড়া হবে। তবে কমলাপুর থেকে রামপুরা অংশে, যেখানে রাস্তার প্রস্থ তুলনামূলক কম, সেখানে টানেলের গভীরতা হবে সর্বোচ্চ ৩৪ মিটার। অন্যদিকে কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়াল অংশের উচ্চতা থাকবে ১৪.১ মিটার থেকে ১৮.৩ মিটার পর্যন্ত। প্রতিটি পাতাল রেলে সর্বোচ্চ ৩৮৮ জন যাত্রী বহন করা সম্ভব এবং ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড অন্তর একেকটি ট্রেন ছাড়বে। পাতাল রেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, আর উড়াল অংশে এটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১৮.৯৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৩৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড, যেখানে প্রতিটি স্টেশনে ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ড যাত্রাবিরতির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাতাল রেল চালু হলে ঢাকার যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, ছোট যানবাহনের উপর চাপ কমবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও হ্রাস পাবে। এতে কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। অল্প সময়ে অধিকসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের ফলে নগরজীবনে আসবে গতি, স্বস্তি এবং একটি নতুন মাত্রা। এই প্রকল্প শুধু আধুনিক নগর ব্যবস্থার প্রতীকই নয়, বরং রাজধানী ঢাকার ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক টেকসই যোগাযোগ বিপ্লবের সূচনা।
আঁখি