ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

পর্দা করায় মহিলা শিক্ষিকাকে করা হয় লাঞ্ছিত, অভিযুক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা বান্দরবান

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১০:০৮, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

পর্দা করায় মহিলা শিক্ষিকাকে করা হয় লাঞ্ছিত, অভিযুক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন

বান্দরবানে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) প্রাথমিক শিক্ষকদের চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একজন মহিলা শিক্ষিকাকে পর্দা করার কারণে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন খানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া মৌখিক চলাকালীন শিক্ষিকাকে লাঞ্ছনা করতে দেখেও উপস্থিত অন্য কর্মকর্তারাও প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে বান্দরবানের রেইছা এলাকায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) এ ঘটনা ঘটে।


সূত্রে জানা যায়, প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটের প্রাথমিক শিক্ষকদের চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা দিতে যান চিংকুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাশরুফা সাঈদী তুন্না। তিনি কক্ষে প্রবেশের পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন খান ওই শিক্ষিকাকে পর্দা নিয়ে জেরা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার পরিহিত পর্দা নিয়ে কটাক্ষ, অপ্রাসঙ্গিক ও লাঞ্ছনা শুরু করে। এছাড়া পর্দা দেওয়ার কারণে অন্য স্কুলের এক শিক্ষিকাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে হুমকিও দেন।


এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের লোকজন ডিডিও’কে ঘেরাও করে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক নেতারাও।


সংশ্লিষ্টদের দাবি, চিংকুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। সেখানে প্রতিদিন ক্লাস করাতে পাহাড় ও ঝিরি ডিঙিয়ে ক্লাস করাতে ছুটে যান এই শিক্ষিকা। তিনি একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী। সেই বিদ্যালয় থেকে বদলি নিতে তার স্বামীকে নিয়ে ছুটাছুটি করেছিলেন জেলা পরিষদ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। এর আগে এই শিক্ষিকা প্রায় এক বছর প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) প্রশিক্ষণাধীন ছিলেন। বদলি ও বিভিন্ন বিষয় শেষে মৌখিক পরীক্ষা দিতে যায়। এসময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে এমন লাঞ্ছনার শিকার হন এই শিক্ষিকা।


ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মাশরুফা সাঈদী তুন্না বলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ডিপিও স্যার আমাকে পর্দা নিয়ে অশোভনমূলক আচরণ করে। পর্দা করলে মুখ দেখা যায় না, কোন স্কুলের শিক্ষিকা চেনা যায় না এমন মন্তব্য করে। এখানেই শেষ নয়, এভাবে পর্দা পরিধান করায় অন্য স্কুলের এক শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও আমাকে হুমকি দেন।


তবে অভিযুক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিতে কেন পর্দা পরে এসেছেন এমন প্রশ্ন করেছি শিক্ষিকাকে। প্রায় সময়েই অন্য শিক্ষিকারাও নানা সুযোগের আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছি। আর বেশি কিছু বলিনি।


প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) মোঃ মশিউর রহমান মণ্ডল বলেন, সকালে ডিপিও স্যারের সঙ্গে একজন শিক্ষিকার পর্দা নিয়ে কিছু বাকবিতণ্ডা হয়েছে। সেজন্য বিকেলে শিক্ষিকা ও তার স্বামীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে।


প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট উত্তম কুমার দাশ গুপ্ত বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে এক শিক্ষিকার পর্দা নিয়ে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে। ডিপিও স্যার হুট করে মুখে বলে ফেলেছেন। কিন্তু কে কী পড়বে, সেটি তার নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা। তবে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পরে ডিপিও’র পক্ষ হয়ে আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি বলে জানান তিনি।

আফরোজা

×