ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

নিজ হাতে প্যারাগ্লাইডার বানিয়ে আকাশে উড়ে স্বপ্নপূরণ করলেন মারুফ

আবিদুর রহমান নিপু, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫৮, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

নিজ হাতে প্যারাগ্লাইডার বানিয়ে আকাশে উড়ে স্বপ্নপূরণ করলেন মারুফ

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার মারুফ মোল্লা (১৮) প্যারাগ্লাইডার তৈরি করে চমক দেখিয়েছেন। তার নিজ হাতে তৈরি প্যারাগ্লাইডার আকাশে উড়িয়ে রীতিমতো সকলের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও তিনি ইলেকট্রিক্যাল থেরাপি মেশিন তৈরি করেছেন। যা হাত-পা ঘামানোর সমস্যার সমাধান দিতে সাহায্য করে। প্যারাগ্লাইডার উড্ডয়ন দেখা ছাড়াও তার তৈরি যন্ত্র দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

ছোটবেলা থেকেই আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন মারুফ। তবে পরিবারের দারিদ্র্যতার কারণে এসএসসি পাশের পর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তার মনোবল এবং আকাশে উড়ার আকাঙ্ক্ষা তাকে কোনোভাবেই থামাতে পারেনি। অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার চর বিষ্ণুপুরের খেজুর তলা ফাঁকা ফসলি জমিতে মারুফ মোল্লা তার তৈরি প্যারাগ্লাইডারে সফল উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চর বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চর বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজাহার মোল্লার ছেলে মারুফ মোল্লা। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মারুফ ছোট। ২০২২ সালে বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তবে অর্থাভাবে পড়ালেখা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। বর্তমানে এলাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করছেন এই তরুণ। প্যারাগ্লাইডার তৈরি করার জন্য বহু বাধা-বিপত্তি পার করতে হয়েছে তাকে। ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে এবং নিজস্বভাবে দেশ-বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে প্রায় এক বছরের চেষ্টায় সফলভাবে তিনি প্যারাগ্লাইডার তৈরি করেন। শুরুতে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু প্যারাগ্লাইডার সফলভাবে আকাশে উড়ানোর পর তার পরিবার এবং এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্যারাগ্লাইডার তৈরিতে ব্যাবহার করা হয়েছে ইয়ামাহা ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন, কার্বন ফাইবার ৪২ ইঞ্চি পাখা (চীন থেকে আমদানিকৃত) প্যারাগ্লাইডার, স্টিলের পাইপ, রশি,সেফটি বেল্ট। প্যারাগ্লাইডারের ওজন ৫ কেজি, ব্যাকপ্যাক প্যারাগ্লাইডারের ওজন ২৫ কেজি। সবমিলিয়ে ওজন ৩০ কেজি। প্যারাগ্লাইডারে ৪/৫ মিনিটের মতো প্রায় ৭০/৮০ ফুট উচ্চতায় উড়েন মারুফ মোল্লা। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কিছু না কিছু তৈরি করার বেশ আগ্রহ ছিলো মারুফের। তার নিজ হাতে তৈরি করা প্যারাগ্লাইডার আকাশে উড়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এলাকার মানুষের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এলাকার ছেলে এমন একটা কাজ করে দেখাল, যা আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয়।

মারুফ মোল্লা বলেন, ছোটবেলা থেকেই পাখি, ঘুড়ি আকাশে উড়া দেখে আমারও আকাশে উড়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল। আমি এক বছরের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছি। আমি দারিদ্র্যতার জন্য পড়ালেখা করতে পারিনি। ইলেকট্রনিকের কাজ করে তিলে তিলে টাকা জমিয়ে দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় করে প্যারাগ্লাইডার বানিয়েছি। 

মারুফ বলেন, নিজ হাতে তৈরি করা প্যারাগ্লাইডারে আকাশে উড়ে স্বপ্ন পুরণ করতে পেরেছি। বিদেশ থেকে প্যারাগ্লাইডার আনতে প্রায় ৮/৯ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এটি তৈরিতে আমার খরচ হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকার মতো। সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আরও বড় আকারের প্যারাগ্লাইডার তৈরি করে এবং এটি বাজারজাত করতে পারবো। এছাড়াও আমি ইলেকট্রিক্যাল থেরাপি মেশিন তৈরি করেছি। যা হাত-পা ঘামানোর সমস্যার সমাধান দিতে সাহায্য করে। তবে এসব নিয়ে আরও গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

চরবিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, মারুফ আমাদের স্কুলের একজন ছাত্র ছিলো। তার তৈরি এসব যন্ত্র এলাকার মানুষের মধ্যে এক নতুন সম্ভাবনা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে হয়তো আরো ভালো কিছু করতে পারবে। আমরা চাই সরকার তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সহোযোগিতা করুক।

এ ব্যাপারে চর বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যদিও সরাসরি দেখা হয়নি। তবে শুনেছি। মারুফ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি আমাদের এলাকার গর্ব। তার সাফল্য ছড়িয়ে পড়ুক।

এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, মারুফ মোল্লা চমৎকার একটি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি তরুণ সমাজের জন্য একটি অনুকরণ হতে পারে। তিনি ট্রেনিং ছাড়াই বেশ ভালো কিছু করেছেন। ট্রেনিং পেলে হয়তো আরো ভালো উদ্ভাবন করতে পারবেন। এ বিষয়ে তিনি আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহোযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

মুমু

×