ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ২ কি.মি বাঁধ

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ২ কি.মি বাঁধ

ছবি : সংগৃহীত

বর্ষা আসার আগেই উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করেছে পদ্মা নদী। শান্ত পদ্মা এবারও ফিরতে চলেছে তার চিরচেনা আগ্রাসী রূপে। এতে উৎকণ্ঠা বাড়ছে শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে। তবে এবারের আতঙ্ক যেন কয়েকগুণ বেশি, কারণ পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশে নদীর গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে বাঁধের কিছু স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে।

 

 

 

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, যদি বাঁধটি ভেঙে পড়ে, তাহলে জাজিরা উপজেলার হাট-বাজার, নাওডোবা, পালেরচর ও আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজারসহ অন্তত চারটি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার।

 

গত বছর পাইনপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস মাঝি পদ্মার ভাঙনে তার ৩০ বিঘা জমি হারিয়ে এখন অস্থায়ীভাবে নদীর পাশেই বসবাস করছেন। তিনি বলেন,  
"গতবার সব হারিয়েছি। এবারও যদি বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে আর কিছুই থাকবে না। সরকার যদি দ্রুত টেকসই বাঁধ না দেয়, সব নদীতে চলে যাবে।"

স্থানীয় বাসিন্দা হাতেম খাঁ বলেন, “নদী একেবারে বাঁধের গায়ে লেগে গেছে। এবার বর্ষায় পুরো বাঁধটা ভেঙে যাবে বলে মনে হচ্ছে।”  
গৃহবধূ আলো বেগম বলেন, “পুরনো বাঁধটা এখন আর টেকে না। দ্রুত নতুন শক্ত বাঁধ দরকার।”

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা করতে দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় বাঁধে ধস দেখা দেয়। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয় এবং সিসি ব্লক পানিতে তলিয়ে যায়।

পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সংস্কারের দায়িত্ব দিলে, ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি ৩৩ হাজার জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক জানান, বর্ষার আগেই সংস্কার কাজ শেষ হবে।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য জুলহাস খাঁ বলেন, “যুগের পর যুগ ধরে এই এলাকার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। এবারের বর্ষায় ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা করছি। সরকার যেন দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন,  
“পদ্মা সেতুর পূর্ব পাশে যে রক্ষা বাঁধটি রয়েছে তা একযুগ আগের। বর্তমানে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা মন্ত্রণালয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।”

আঁখি

×