ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

হঠাৎ ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে অপ্রস্তুত কৃষক, ভালো ফলনেও ব্যাপক ক্ষতির শিকার

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫১, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

হঠাৎ ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে অপ্রস্তুত কৃষক,  ভালো ফলনেও ব্যাপক ক্ষতির শিকার

ছবিঃ সংগৃহীত

বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ও ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। মাঠে থাকা উঠতি পাকা বোরো ধান-সহ আম, সবজি ক্ষেত ও পান বরজের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে জেলার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যান চলাচল বন্ধ থাকে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) শেষ বিকেলের দিকে প্রচণ্ড বজ্রপাতের সাথে শিলা বৃষ্টিতে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়।
চিতলমারীর শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক শেখর ভক্ত বলেন, ‘বহুকষ্টে কিষাণ (ক্ষেত মজুর) জোগাড় করে সকাল থেকে বিলের ধান কেটে বাড়ি তুলছিলাম। এক একর জমির দুই-তৃতীয়াংশ ধান কাটা হয়েছে, এ অবস্থায় শিলা বৃষ্টির সাথে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের এখানে কয়েক মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে সদর বাজার, শ্রীরামপুর, কালশিরা, বারাশিয়া, শ্যামপাড়া, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে, গাছপালা পড়েছে, জমিতে কাটা ধান ও পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
একই এলাকার কৃষক কৃষ্ণপদ মণ্ডল বলেন, ‘ঝড়ে আমার ২ বিঘা জমির পাকা বোরো ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বোরো ধান কাটার সময় হয়েছে। এই সময়ে ধান মাটিতে পড়লে ধান হয় কম, পাতান হয় বেশি। ধারদেনা করে, কষ্ট করে ফসল ফলিয়েছি। খুব ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু ঘরে তোলার আগে সব শেষ হয়ে গেল।’
সদর উপজেলার ডেমা এলাকার কৃষক হালিম শেখ, রামপালের বাঁশতলির কৃষক মাহাবুব হোসেন প্রায় অনুরূপ ক্ষতির কথা বলেন। ফকিরহাট কাঠলতলা এলাকার কৃষক শেখ আলফাজ হোসেন বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে পাকা ধানের পাশাপাশি পানের বরজ, আম, জাম, জামরুলসহ অধিকাংশ কৃষি ফসলের খুব ক্ষতি হয়েছে।’
জেলার কাড়াপাড়া, ডেমা, ষাটগম্বুজ, গোটাপাড়া, বেমরতা, জিউধরা, বাইনতলাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ঘর ও গাছগাছালি ভেঙে পড়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ঝড়ে রান্নাঘর, থাকার ঘরের চালা উড়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে গাছ। জানি না কিভাবে নতুন ঘর করবো।’
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবাগত উপ-পরিচালক মো: মোতাহার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এবার বাগেরহাট জেলায় ৬২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৬৫ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১০৪%। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬,৭৯০ মেট্রিক টন চাল। বাম্পার ফলন হওয়ায় অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। আমাদের অধিকাংশ ধান কর্তন হয়েছে। কিন্তু যারা দেরিতে বপন করেছিলেন, তাদের ধান মাঠে আছে, কাটা চলছে। এ অবস্থায় ঘরে তোলার সময়ে আজকের শিলা বৃষ্টি-সহ কালবৈশাখীতে কৃষক কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। তবে মাঠে পানি জমে না থাকলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তারপরও মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। তাৎক্ষণিক ক্ষতির যথাযথ হিসাব দেওয়া যাচ্ছে না।’ তাঁর ভাষায়, ‘মাঠে থাকা পাকা ধানসহ গুটি আম ও পান বরজের কমবেশি ক্ষতি তো হয়েছে।’

 

মারিয়া

×