ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

মাঠে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ, কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৮:২০, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

মাঠে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ, কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

ছবি: জনকন্ঠ

রাজবাড়ী জেলার মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। দোল খাচ্ছে ধানের সোনালি শীষ, উঁকি দিচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। চলতি মৌসুমের বোরো ধান এবং ধানের বীজ উৎপাদনে জেলার মাঠ জুড়ে বইছে সাফল্যের সুবাস। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাম্পার ফলনের আশা করছেন সাধারণ কৃষক। বিশেষ করে জেলার একমাত্র “আয়ান সীড লিঃ” কর্তৃক এক শত একর জমিতে রোপণকৃত বোরো ধান বীজের ফলন দেখে সাধারণ কৃষক আরও বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। উৎপাদনকারী কৃষকদের মতে, এ বছর ফলন অতীতের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।


মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজবাড়ী জেলা ৪২টি ইউনিয়নে উৎপাদিত হয়েছে জনপ্রিয় ও উচ্চফলনশীল জাতের ধান বীজ। এর মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান-১০৪, ব্রি ধান-১০০, ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৭৪, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-২৯ এবং ব্রি ধান-২৮। “আয়ান সীড লিঃ” স্থানীয় কৃষি অফিস ও জেলা বীজ সংরক্ষণ অফিসের পরামর্শে বোরো ধানের বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন। এবারও আয়ান সীড লিঃ একশ একর জমিতে বোরো ধানের বীজ সংরক্ষণ করার জন্য আবাদ করেছেন। 
আয়ান সীড লিঃ কর্তৃক উচ্চমানের বীজ শুধু জেলার চাহিদা পূরণেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানকার উৎপাদকরা বিভিন্ন জেলায়ও বীজ সরবরাহ করছেন। কৃষি অফিস, বিভিন্ন ধান বীজ কোম্পানি গুলো সরাসরি রাজবাড়ী থেকে মানসম্মত ধান বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকেন।


রাজবাড়ীর উর্বর মাটি ও শ্রমিক কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের ফসল এই সাফল্য। সময় মতো আবহাওয়া ও সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনার ফলে জেলার কৃষকরা এবারও তাদের শ্রমের সঠিক ফল পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার ৫টি উপজেলায় ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন কম হয়েছে।


আয়ান সীড লিঃ এর মালিক জেলার সেরা কৃষক হুমায়ন আহমেদ জানান, ধান আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফসল। স্থানীয় কৃষি অফিস ও বীজ সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমি ব্যক্তিগত ভাবে “বীজ সংরক্ষণের জন্য একশত একর ধান আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানও খুব ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, তবে ধানের ভাল মূল্যে না পেলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। লোকসান হলে আমরা সাধারণ কৃষক ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবো। সুতরাং সরকারের কাছে দাবি ধানের মূল্যে যেন কৃষকের কথা চিন্তা করে করা হয়।


রাজবাড়ী জেলা বীজ প্রত্যায়ন অফিসার মোহাম্মদ মাছিদুল রহমান জানান, স্থানীয় “আয়ান সীড লিঃ” আমাদের পরামর্শে ব্রি ধান-১০০, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান ৭৪ আবাদ করেছে। এখানে ধানের বীজ তৈরি হচ্ছে। যেখান থেকে ফাউন্ডেশন সীড হবে। এই বীজ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কোন প্রকার রোগের আলামত পাওয়া যায়নি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আগামী বছর এই ধানের বীজ বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হবে। আশাকরি সাধারণ কৃষক অনেক লাভবান হবে।


রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, রাজবাড়ীর উর্বর মাটি। যে কারণে এই জেলায় প্রতিটি ফসল ভালো হয়। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, এবার রাজবাড়ীতে ১৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদনের টার্গেট ছিল। তবে এই জেলায় এবার পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হওয়ায় বোরো ধান উৎপাদনের টার্গেট পূরণ হয়নি। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

শামীম/রবিউল

×