ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

মহেশখালীতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা

কালারমারছড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি অনুমোদন, অপরাধ দমনে নতুন আশার সঞ্চার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

কালারমারছড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি অনুমোদন, অপরাধ দমনে নতুন আশার সঞ্চার

ছবি: সংগৃহীত

মহেশখালী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির নিয়মিত সভা সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেদায়েত উল্ল্যহ্’র সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় উপজেলার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল- মহেশখালীর কালারমারছড়ায় একটি নতুন পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের অনুমোদন প্রদান।

সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, নৌবাহিনীর মহেশখালী কন্টিনজেন্টের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট মোহাইমেন হোসেন, মহেশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রতুল কুমার শীল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাইছার আহমেদ, কোস্টগার্ড প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিগণ।

সভায় বক্তারা মহেশখালীর সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী ও হোয়ানক এলাকায় সন্ত্রাস, চুরি, ছিনতাই, জমি দখল সংক্রান্ত সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সকলে সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় ইউএনও হেদায়েত উল্ল্যহ্ বলেন, “মহেশখালীতে অপরাধ দমনে পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অপরাধপ্রবণ এলাকা কালারমারছড়া বাজার, নোনাছড়ি ও আধাঁরঘোনায় নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।” নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের প্রতিনিধিরাও জানান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে সমুদ্র ও স্থলপথে যৌথ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কালারমারছড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। অতীতে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর মহেশখালী থানার মূল কার্যালয় থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হতো, যার ফলে অপরাধীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হতো। স্থানীয় ফাঁড়ির মাধ্যমে দ্রুত পুলিশী হস্তক্ষেপ নিশ্চিত হবে এবং জনগণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। মাতারবাড়ী, কালারমারছড়া ও হোয়ানক এলাকায় বিদ্যমান কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও এই ফাঁড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া স্থানীয় বাজার ও জনবহুল এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে তা কার্যকর হবে। 

মহেশখালীর অপরাধ পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত চিত্র মহেশখালীর কালারমারছড়া, হোয়ানক ও মাতারবাড়ী এলাকায় বিগত দুই বছরে প্রায় ৮-১০টি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জমি বিরোধ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। এসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, যার অন্যতম কারণ ছিল স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশের অনুপস্থিতি।

পুলিশ ফাঁড়ি অনুমোদনের খবরে স্থানীয় ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবী, কৃষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকেই জানিয়েছেন, "এখন রাতের বেলা বাজারে যাওয়া বা বাড়ি ফেরা নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা অনেকটাই কমে আসবে।"

স্থানীয় একজন মুরুব্বি বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে কালারমারছড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে আজ তা বাস্তবায়নের পথে। আশা করি, এবার আমাদের সন্তানরা নিরাপদে স্কুল-কলেজে যেতে পারবে।” 

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, খুব দ্রুত কালারমারছড়ায় ফাঁড়ির জন্য স্থান নির্ধারণ, জনবল নিয়োগ এবং কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।         

আসিফ

আরো পড়ুন  

×