
ছবি: লালমোহনের কালমা ইউনিয়নের লেজছকিনা এলাকায় কৃষকের ক্ষেতের বোরো ধান
বিস্তীর্ণ মাঠ সেজেছে সোনালী রূপে। এখন চারদিকে কেবল সোনালী রঙের সমারোহ। বর্তমানে ভোলার লালমোহন উপজেলার বোরো ধান চাষিদের তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন এখন এভাবেই সোনালী রঙে মাঠের পর মাঠজুড়ে দুলছে। এ ধানকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধে আছেন উপজেলার কৃষকরা। আর মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের ভেতরই কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটা শেষ করবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে উফশী জাতের ব্রি ধান- ৬৭, ব্রি ধান-৭৪, ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-১০০, ব্রি ধান-১০১, ব্রি ধান-১০২ এবং ব্রি ধান-১০৪ আবাদ করেছেন কৃষকরা। এ ছাড়াও দূর্বার, এসএল-৮, এসিআই-১ সহ আরও কয়েকটি জাতের হাইব্রিড জাতের ধানেরও আবাদ হয়েছে এই উপজেলায়। এ বছর কৃষকদের আবাদকৃত জমি থেকে অন্তত ৬৬ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি মণ ধান ১ হাজার টাকা মূল্যে বর্তমান বাজারে সর্বমোট ১৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় এই উপজেলার চাষিরা তাদের কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের ভেতরই কৃষকরা এসব জমির ধান সংগ্রহ শেষ করতে পারবেন।
লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লেজছকিনা এলাকার চাষি মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ মৌসুমে ২৫০ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের ব্রি ধান-১০১ চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত সেচের পানির সংকট থাকায় ধান আবাদে কিছুটা ব্যাঘ পেতে হয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে সেই সমস্যা কাটিয়ে সুন্দরভাবেই ধানের আবাদ করেছি। বর্তমানে জমিতে আশানূরূপ ফলন রয়েছে। জমির সব ফসল কর্তন শেষে ভালো লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি।
মো. মাকসুদুর রহমান নামে ওই এলাকার আরেক চাষি জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই আমন এবং বোরো মৌসুমে ধানের চাষ করে আসছি। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৬৬ শতাংশ জমিতে উফশী জাতের ব্রি ধান-৭৪ চাষ করেছি। জমি প্রস্তুত, শ্রমিক ও কীটনাশকসহ ধান কাটা শেষ করা পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। বর্তমানে জমিতে আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো ফলন রয়েছে। সব ধান কাটা শেষে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার ধান বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের কর্তারকাচারি সংলগ্ন এলাকার মো. ইসমাইল হোসেন নামে এক চাষি বলেন, আমি এ বছর ৩৩ শতাংশ জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এতে আমার ব্যয় প্রায় ১৩ হাজার টাকার মতো। আশা করছি এই ৩৩ শতাংশ জমিতে অন্তত ২৮মন ধান হবে। ওই ধান প্রতি মণ অন্তত ১ হাজার টাকা করে বাজারে মোট ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন জানান, ধান চাষি কৃষকরা মৌসুমের শুরুর দিকে সেচের পানির সংকটে পড়লেও পরে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা ভালোভাবেই বোরোর আবাদ সম্পন্ন করেছেন। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্যোগ না থাকায় এবং আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় এই উপজেলার বোরো ধান চাষিদের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু ধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় আক্রমণ করলেও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে এই মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধানের কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন। আমরা সব সময় কৃষকদের পাশে আছি। এছাড়া কৃষকরা যেন কোনো ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকেও আমরা নিয়মিত নজর রাখছি।
ফারুক