
ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গাজীখালী নদীর ওপর নির্মিত বিকল্প বেইলি সেতু মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না করায় বৃষ্টির পানিতে সেতুর একপাশ ৫ ফুট মাটির নিচে দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন পারাপার করতে হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে গাজীখালী নদীর ওপর মূল ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ব্রিজটি উদ্বোধন করা হয়। এরপর মূল ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চললেও বিকল্প ডাইভারশন বেইলি সেতু সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার জন্য চালু রাখা হয়। স্থানীয় জনতার অনুরোধে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সেতুটি অপসারণ করেনি।
বর্তমানে এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। সাটুরিয়া, ধামরাই ও নাগরপুর উপজেলার মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে সাটুরিয়া ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। হাটের দিনে চলাচল আরো বেড়ে যায়। কিন্তু সেতুর বর্তমান ভগ্নদশা পরিস্থিতি স্থানীয়দের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। অনেক শিশু শিক্ষার্থী ও পথচারী গর্তে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর একাংশ দেবে গিয়ে কাত হয়ে পড়েছে। সেতুর পাশে থাকা ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটির নিচ থেকে মাটি সরে গেছে, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করেছে। সেতু কর্তৃপক্ষ সতর্কীকরণ ব্যানার লাগালেও জনসাধারণ বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গাজীখালী নদীর ওপর মূল ব্রিজ দিয়ে বেশির ভাগ সময় গাড়ি চলাচল করে থাকে। আর বিকল্প ডাইবেশেন বেইলি সেতু দিয়ে সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করে থাকেন সময় বাঁচানোর জন্য। ওই ডাইবেশন সেতুর সাথেই সাটুরিয়া উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল। চারটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়া উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হাটে বেচাকেনা করা হয় ওই বিকল্প সেতু দিয়েই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, সেতুর পাটাতনে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং রাতে চলাচলের সময় অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়ছেন। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে কিছু পাটাতন জোড়া লাগালেও তা যথেষ্ট নয়।
সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিকল্প সেতুর পাটাতন মরিচা ধরে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর সব পাটাতন আগলা হওয়ায় রাতের বেলায় চলাচল করার সময় পথচারীরা অনেকে গর্তে পরে আহত হচ্ছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে আমরা পাতাটন গুলো নিজ খরচে জ্বালায় দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছি। বিশেষ করে হাসপাতাল আসা যাওয়া এ সেতু দিয়ে সহজ হওয়ায় রোগীরা বেশিরভাগ সময় ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দিয়েই পারাপার হয়। দ্রুত সেতুটি সংস্কার করার দাবীও জানান তিনি।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার সরকার বলেন, বিকল্প সেতুটি নির্মাণের সময় নিচু করে তৈরি করায় বর্ষায় কচুরি পানায় ভরে যায়, ফলে পরিবেশ দূষণ ও মশার উৎপাত বেড়ে যায়। তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ উঁচু সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মামুনুর অর রশিদ বলেন, সেতুটি দ্রুত মেরামত করা হলে হাসপাতালে রোগীদের আসা-যাওয়া সহজ হবে এবং জনদুর্ভোগ কমবে।
এ বিষয়ে কথা হয় মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দিয়ে জনসাধারণ মানুষকে চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। এটি ছিল একটি ডাইবেশনের ওপর বিকল্প সেতু। এটি একাধিকবার অপসারণের জন্য গেলেও তা জনসাধারণের অনুরোধ ও বাঁধার কারণে সেতুটি অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জনসাধারণের কথা চিন্তা করে সেতুটি গাজীখালী নদীর উপর রেখে দিয়েছে। তবে জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে সেতুটি সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
মোঃ মাহবুবুর রহমান রানা / ফারুক