
কুড়িগ্রামে চিলমারী রৌমারী নৌ-রুট দীর্ঘ চার মাস ধরে নাম্যতা সংকটের কারণে বন্ধ আছে। ফেরি চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়েছে কুড়িগ্রাম, রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারির মানুষেরা। ফেরি বন্ধ থাকায় শুধু যাত্রীরাই নয় ভোগান্তিতে রংপুর, লালমনিরহাট নীলফামারীর পন্য পরিবহনকারীরাও।
এদিকে, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে নৌপথের খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। ফলে প্রায় চার মাস থেকে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই নৌপথে নাব্যতা সংকট দেখিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়। মাসের পর মাস ফেরি বন্ধ থাকার ফলে সরকারের লোকসানের পাশাপাশি জনগণ ভোগান্তিতে পড়ছে।
এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসিকে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের সময়ে সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এই নৌপথে কুঞ্জলতা ও কদম নামের দুটি ফেরি পণ্যবাহী ট্রাকসহ যাত্রী নিয়ে নিয়মিত পারাপার করে আসছিল। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা–সংকটের কারণে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করতে বিআইডব্লিউটিএ ব্রহ্মপুত্র নদের ২২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খনন শুরু করেন। খনন কাজে বিআইডব্লিউটিএ এর সরকারি ১টি খনন যন্ত্র ও বেসরকারি ৫টি খনন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ছয়টি খনন যন্ত্র দিয়ে নাব্যতা সংকটের চেষ্টা করা হলেও ব্রহ্মপুত্র নদের স্রোত ও অতিরিক্ত বালুর কারণে খনন স্থায়ী না হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বিআইডব্লিউটিএ বেসরকারি খনন যন্ত্র বন্ধ করে দেন। এরপর রৌমারী ফেরিঘাটের কাছে সরকারি খনন যন্ত্রে কিছু খনন কাজ চালু রাখা হলেও গত ২৭ মার্চ সেটি বন্ধ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে গিয়ে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ৬টি খনন যন্ত্র দিয়েও নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল এসে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকট পরিদর্শন করে খনন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে খনন বন্ধ রয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রায় দুই ফুট পরিমান বেড়েছে। আর কিছু পানি বাড়লে ফেরি চলাচল শুরু করা যাবে বলেও তিনি জানান।
এই রুট দিয়ে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক ড্রাইভার আব্দুল মোতালেব বলেন, "এই রুটটি বন্ধ থাকার কারণে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কেননা এই রুটটি চালু থাকলে আমরা অনেক সহজে ঢাকা পৌঁছাতে পারি। কিন্তু এখন আামদের রংপুরও বগুড়া দিয়ে ঘুরে যেতে অনেক সময় এবং খরচ হচ্ছে বেশি। আমরা তাড়াতাড়ি এই রুটটি চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।"
রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে নাব্যতা সংকট দেখা দিবে এটা বিআইডব্লিউটির জানা থাকবার কথা। সেই অনুযায়ী তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হতো। সেটি না করে বর্ষা মৌসুমে বিআইডব্লিউটি শীতনিদ্রা যাপন করে। এখন নাব্যতা সংকট দেখিয়ে সাড়ে তিন মাস থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নদ-নদীর পানি কমেছে। সেখানে তো ফেরি চলাচল থেমে নেই? এটি কুড়িগ্রামের জনগণের সাথে বিআইডব্লিউটি এর বৈষম্যমূলক আচরণ।
রাজিবপুর উপজেলার আব্দুল্লাহ শাহেদ বলেন, "ফেরি বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যেতে পারছি না। এই রুটি চালু হলে এখানে শুধু রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলার মানুষই নয় বরং কুড়িগ্রাম তথা লালমনিরহাটের মানুষ এই ফেরি দিয়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে পারে। কর্তৃপক্ষকে তাড়াতাড়ি এই রুটটি চালু করা দরকার।"
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকটে সাড়ে তিন মাস থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। এতে বিআইডব্লিউটিসির প্রায় প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে ১২ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলে ফেরির যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কয়েকবার বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বরাবর ব্রহ্মপুত্র নদে খনন চালু রেখে ফেরি চলাচল উপযোগী করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা খনন কাজ শেষ করলেই আমরা ফেরি চালাতে পারবো। ব্রহ্মপুত্র নদের রৌমারী ঘাটে আমাদের দুটি ফেরি চলাচলের অপেক্ষায় রয়েছে।
আবীর