ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

একটি ট্রেন ধুতেই ব্যয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১০:৫২, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

একটি ট্রেন ধুতেই ব্যয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন পরিষ্কার করার জন্য ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল, একটি ঢাকার কমলাপুরে, অন্যটি রাজশাহীতে। তবে উদ্বোধনের মাত্র ২০ মাসের মাথায় প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ হয়ে যায়।

 

 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই সময়ের মধ্যে মোট ২,৯২৯ বার ট্রেন ধোয়া হয়েছে। ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে হাতে ধুলে খরচ হয় মাত্র, ১ হাজার টাকা।

 

 

এই ওয়াশিং প্ল্যান্টে কিছু স্বয়ংক্রিয় ব্রাশ, ডিটারজেন্ট, পানি ছিটানোর ব্যবস্থা এবং বৈদ্যুতিক পাখা ছিল। এত সাধারণ একটি ব্যবস্থার পেছনে এত বেশি ব্যয় নিয়েই তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। বর্তমানে প্ল্যান্টগুলো অচল, আর এগুলো পুনরায় চালুর জন্য নতুন করে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা রেল কর্মকর্তাদের মতে, মোটেই যৌক্তিক নয়।

এ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেগুলোর কার্যকারিতা দেখতে ২০১৯ সালে তিনজন রেল কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফরেও যান। কিছুদিন পরই যন্ত্রপাতি কেনার সঙ্গে যুক্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অবসরে যান।

 

 

ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয়েছিল কোচ কেনার একটি প্রকল্পের আওতায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পটি বড় দেখাতে এবং বিশেষ কিছু ব্যক্তির সুবিধার্থে এই যন্ত্র কেনা হয়। তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আগ্রহেই এটি বাস্তবায়িত হয়। জানা গেছে, তিনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হয়ে কাজ করছিলেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

 

 

২০০৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে, যার বড় অংশই এসেছে বিদেশি ঋণে। কিন্তু এত বিনিয়োগ সত্ত্বেও রেলের আর্থিক অবস্থা উন্নত হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১,৭৮৩ কোটি টাকা, অথচ ব্যয় ছিল ৩,৩০৭ কোটি টাকা। লোকসান দাঁড়ায় ১,৫২৪ কোটি টাকা—অর্থাৎ আয় প্রতি ১ টাকায় ব্যয় প্রায় ২ টাকা।

কমলাপুরের ওয়াশিং প্ল্যান্টটি ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত আংশিক চালু থাকলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সালের মে মাসে মাত্র দুটি ট্রেন ধোয়া হয়, এরপর এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
 

আঁখি

×