ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

উত্তপ্ত ভাঙা: একদিনে ৩ সংঘর্ষে আহত শতাধিক, ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ

অভিজিৎ রায়, নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ২৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৮:১৫, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

উত্তপ্ত ভাঙা: একদিনে ৩ সংঘর্ষে আহত শতাধিক, ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ

ছবি : সংগৃহীত

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় একদিনে পৃথক তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক ব্যাক্তি। সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এসব সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনীর সহায়তায়  ঘটনাস্থল  থেকে ১১জনকে গ আটক করেছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সারাদিন ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে  আহত ১৩ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১জনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

 

 

এর মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাসষ্টান্ডের বাজার দখল এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছে। এ সময় প্রতিপক্ষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। আহতদেরকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী, রেব ও ডিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে ১১জনেকে আটক করেছে। 

 


পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সুলতান মাতুব্বর ও ইয়াকুব মাতুব্বর গ্রুপের মধ্যে পুখুরিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ ও  আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল। বাজার এলাকায় চাঁদা আদায়ের মূল টার্গেট নিয়ে ও টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারন করে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতেই বাজার দখলের জন্য ও এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বাজার থেকে বিতাড়িত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এর জের ধরে শনিবার সন্ধ্যায় আবুল কালাম ও ইয়াকুব মোল্লার নেতৃত্বে এক পক্ষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অপর পক্ষের জামাল মিয়ার বাড়ি ভাংচুর চালায়।

 

 

এর জের ধরে রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে সুলতান মাতুব্বর ও মজিবুর তালুকদার তার লোকজন নিয়ে ফজরের নামাজ শেষে না হতেই বাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকে। খবর পেয়ে অপর গ্রুপের লোকজনও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। বাজারে দীর্ঘ সময় চলে তাদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। এতে এলাকায় রনক্ষেত্রে পরিনত হয় এবং ভাঙ্গা সদরপুর সড়ক পথে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পাশাপাশি পুকুরিয়া গ্রামের হারুন মোল্লা, বিল্লাল মোল্লা, আবুল কালাম মোল্লাসহ বিভিন্ন বাড়ি ভাংচুর এবং শাহজাহান কসাই ও ফজলুল হকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুখুরিয়া বাজারে বি়ভিন্ন দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এসময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ১১ জনকে আটক করেছে।

 


এদিকে রোববার  বিকেলে  উপজেলার আলগী ইউনিয়নে দুটি সংঘর্ষ হয়। উপজেলার   সুয়াদী গ্রামে আম পাড়া নিয়ে  চাচা  - ভাতিজা দু'পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয় ৩০জন। এর মধ্যে  এক জনের অবস্থা গুরুতর। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সময় উপজেলার  আলগী ইউনিয়নের  হরিরহাট বাজারে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। এলাকায়  উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানসিভ জুবায়ের জানান, রবিবার ভাঙ্গার তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৩ জনকে আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। আরো কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত  চিকিৎসার  জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষের এই ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সতে সিট সংকট দেখা দিয়েছে।

 

 

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন জানান, রবিবার সারাদিন ভাঙ্গায় ৩টি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ খবর পেয়ে ৩ টি স্থানে যেযে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুকুরিয়ার সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি  নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।  এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের  অসংখ্য  আহত হয়েছে । এসব ঘটনায় ১১জনকে  আটক করা হয়েছে। ৩ টি সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষই কোন অভিযোগ দায়ের করে নাই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আঁখি

×