
ছবি : সংগৃহীত
ঢাকার উড়ালসড়কগুলোর নিচে পড়ে থাকা বিশাল পরিমাণ জমি নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ২০৭ একর জমি অলস পড়ে থাকার পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিত ব্যবহারের শিকার হচ্ছে। এসব জায়গায় এখন গড়ে উঠেছে ওয়ার্কশপ, গুদামঘর এমনকি ঘোড়ার আস্তাবলের মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা। অথচ সামান্য সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা থাকলে এসব জায়গাকে নগরবাসীর জন্য কল্যাণমূলক কাজে লাগানো যেত। বিশ্রামাগার, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিশুদের খেলার মাঠ বা সবুজ উদ্যান হিসেবে গড়ে তোলা যেত এসব স্থান।
সমস্যার মূলে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এই মূল্যবান সম্পদ জনগণের সেবায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে এসব জায়গাকে গণপরিষদে রূপান্তর করা সম্ভব। এতে অত্যাধিক বাজেটেরও প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকর পদক্ষেপ।
বর্তমানে এসব জমির অদক্ষ ব্যবহারের কারণে নগরী প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অথচ পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব জায়গা থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ নগরীর পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। উড়ালসড়কের নিচের জমিগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এসব জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখল রোধে কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও সীমিত সম্পদের কথা বিবেচনায় নিয়ে উড়ালসড়কের নিচের জমিগুলোর সঠিক ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থানীয় সরকার ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই অব্যবহৃত সম্পদকে নগর উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে। অন্যথায়, এই মূল্যবান জমিগুলো নগরীর আরেকটি অদক্ষ ব্যবস্থাপনার নজির হিসেবেই রয়ে যাবে।
আঁখি