
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, পশ্চিমা জীবন ধারায় বিশ্বাসী কিছু এনজিও কর্মীদের দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নারী কমিশন গঠন করে কোরআনের বিরুদ্ধে আপনি কটাক্ষ করিয়েছেন। আমি দাবী তুলতে চাই ৯০ ভাগ মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য নারী কমিশনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রবিবার ২৭ এপ্রিল বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যার বিচার ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনাকে তৌহিদী জনতা সমর্থন দিয়েছে। তবে সেটি নিঃশর্ত সমর্থন নয়। আপনি কোরআনের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে আপনাকে ক্ষমতার গদি থেকে উৎখাত করতে আমাদের এতটুকু হৃদয় কাপঁবে না। কোরআনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে আপনার পরিণত শেখ হাসিনার চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না। ইসলাম নারীদের পুরুষের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে। দেশের আবহমানকাল থেকে সকল নারী ইসলাম ও আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছেন।
সংবিধান নিয়ে তিনি বলেন, যে তিনটি মূল নীতিকে কেন্দ্র করে ৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল তা মূলত ভারতীয় সংবিধানের কপি-পেস্ট। এর মধ্যে স্বাধীন দেশে লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ভারত মাতার চরণ তলে বলি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত চেতনাকে আড়াল করে ৭২ এর ভেজাল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দাঁড় করানো হয় এবং বাংলাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে আওয়ামী লীগ অর্ধ শতাব্দি পর্যন্ত রাজনীতি করেছে। কেউ স্বৈরতন্ত্র, বাকশালের বিরুদ্ধে নামলে তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলে আখ্যায়িত করে দেশে এক দলীয় স্বৈরতন্ত্রের রাজনীতির পথ উন্মক্ত করেছিল আওয়ামী লীগ।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তে ভেসে গেছে শেখ হাসিনা। দেশ থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের রাজনীতির কবর হয়েছে। এই দেশের স্বাধীনতা ১৯৭২ সালে একবার ছিনতাই হয়েছিল। ২০২৪ সালের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে ছিনতাই করার জন্য ২০২৫ সালে একটি কুচক্রী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। আমি বলতে চাই, ২৪ এর প্রকৃত ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনতাকে দেশকে যেভাবে উৎখাত করা হয়েছে, আর কোনদিন সেই চেতনাকে বাংলার রাজনীতিতে পূনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না।
মামুনুল হক বলেন, প্রশাসনের যেসব উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ২০০৯ সালে পিলখানা ট্রাজেডি, ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বর, ২০২১ সালে মোদী বিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা নিরাপরাধ মানুষকে পাখির মত গুলি করে মেরেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনা ও তাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রত্যেক সংগঠনের নেতাদের খুনের বিচার করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যাসহ সকল গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। আমাদের প্রথম দাবী আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা, দ্বিতীয়ত হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করা, তৃতীয় বিচারের পর আওয়ামী লীগের আন্ডা-বাচ্চা কেউ যদি বাঁচে তারপর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার শখ পূরণ করা হবে। আমার বিশ্বাস নিরপেক্ষ বিচার হলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত নিরাপরাধ কোন মানুষ আওয়ামী লীগের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক বলেন, আপনার বিএনপি শত শত, হাজার হাজার গুম, খুন হত্যার শিকার নিহত শহীদের সাথে গাদ্দারি করতে পারেন। তবে দেশের জনগণ গাদ্দারি করতে পারে না। সকল শহীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে দেশের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের কোন রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না। তিনি বৈষম্যহীন, ইনসাফ সমাজ গড়তে আল্লাহ প্রদত্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিতের প্রতি আহ্বান জানান।
খেলাফত মজলিসের রংপুর জেলা সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল হকের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শারাফাত হোসাইন, কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আবুল হাসনাত জালালীসহ কেন্দ্রীয় ও বিভাগের ৮ জেলার নেতৃবৃন্দরা।
রাজু