
ছবি: জনকণ্ঠ
২৩ মাস বয়সী সন্তান জোনায়েদ কে নিয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বেডে অবস্থান করছিলেন কবির মিয়াজি ও ফাতেমা বেগম দম্পতি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া শিশুর চিকিৎসার জন্য বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এখানে আসার পর এপর্যন্ত বাইরে থেকে বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৯০০ টকার ওষুধ কিনেছেন। কেনা ওষুধের মধ্যে একটি এন্টিবায়েটিক ওষুধ জিবেক-২০০ (এজিথ্রোমাইসিন) রয়েছে। অথচ এ এন্টিবায়োটিক হাসপাতালে সরবরাহ রয়েছে। যা রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। হাসপাতাল থেকে মাত্র একটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন।
এখানেই শেষ নয়। শিশু জোনায়েদের কয়েকটি টেস্ট দেওয়া হয়েছে, ম্যাক্স হাসপাতালে করানোর জন্য। কবির মিয়াজি জানালেন, টেস্ট করতে তার ২১০০ টাকা গুনতে হয়েছে। তার মন্তব্য- এই টেস্টগুলো হয়তো না করালেও হতো। এছাড়া ম্যাক্স হাসপাতাল থেকে না করে অন্য কোথাও থেকে করালে ১৪-১৫ শ’ টাকায় পারতেন। ছোট বালিয়াতলী গ্রামের এই দম্পতির সঙ্গে হাসপাতালে কথা হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। ১২ টায়। একদিন পরে ওইদিন সকালে একবার ডাক্তার তার সন্তানকে দেখে গেছেন বলে জানান। এ পর্যন্ত এ দম্পতির প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একই ধরনের কথাবার্তা বললেন দুই বছরের শিশু রোগী শ্রাবণীর মা সমাপ্তি। বাইরে থেকে অধিকাংশ ওষুধ কিনতে হয়েছে। ঘুটাবাছার রোগী লাইলি বেগম (৪০) জানালেন, সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একই দশা অধিকাংশ রোগীর। জানালেন তারা, সকালে প্রত্যেককে ৫ টাকা দামের ২টি বনরুটি ও কলা দেওয়া হয়েছে নাস্তার জন্য।
দায়িত্বরত নার্সরা জানালেন, মোট ৪৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ওয়ার্ডে। বাকিরা নারী ও শিশু। কিন্তু পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে পাওয়া গেল মাত্র পারভেজ নামের একজন রোগী। ৫ নম্বর বেডে অবস্থান করছেন। তারি দাবি টাইফয়েডে আক্রান্ত রয়েছেন। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে মাত্র দুইজন চিকিৎসক উপস্থিত পাওয়া গেছে। একজন স্বাস্থ্য প্রশাসক জেএইচ খান লেলিন। অপরজন শরীফ শায়লা ইসলাম। আউটডোরে তখন পর্যন্ত মোট ২৩৭ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য টিকেট কাটা সম্পন্ন করেছে। প্যাথলজি বিভাগে ছাবিনা (১৭) নামের রোগী দেখালেন, তাকে চারটি টেস্ট বাইরে (ম্যাক্স হাসপাতাল) থেকে ১২০০ টাকায় করাতে হয়েছে। এক্সরে বিভাগে তালা ঝুলছে। ক্যশিয়ারও নেই অফিসে। অবস্থ্দাৃষ্টে মনে হচ্ছে যার যেভাবে ভালো সেভাবেই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। তবে রোগীরা বাথরুম টয়লেট আগের চেয়ে অনেকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ জেএইচ খান লেলিন জানান, ৩৬ জন চিকিৎসকের কাগজপত্রে। আছেন মাত্র নয় জন। তার মধ্যে দুই জন প্রেষণে রয়েছেন। দুই জন আছেন ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে। এছাড়া বাকি একজন অসুস্থ এবং একজন অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে মাত্র দুইজন চিকিৎসককে প্রায় ২০০ রোগী সামাল দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসককে প্রশাসনিক কাজে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে এখানকার স্বাস্থ্য সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে বেশ কয়েকজন দালাল দেখা গেল। রোগীদের টানাহেচড়াও করা হচ্ছে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু রোগিদের ভাগ্যে সব মেলে না। ডাক্তারদের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রশাসক ২০১৪ সালে এখানে যোগদানের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিরা অধিকাংশ ২২ থেকে ২৫ সালের যোগদান করা। তবে কর্মচারীরা অনেকে আছেন কবে থেকে তা নিজেরাও ভুলে গেছেন।
জনশ্রæতি রয়েছে নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেটের কারণে বহু অভিজ্ঞ চিকিৎসক এখানে যোগদান করে থাকতে পারেন না। বর্তমানে ডাক্তার সংকটে কুয়াকাটা ২০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা উপজেলার চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। হাসপাতালে গড়ে পাওয়া যায় দুই-তিন জন চিকিৎসককে পাওয়া যায়। কখনো খালিও থাকে। ডাক্তারসহ ২৪৬টি পদের মধ্যে ১০৪টি পদ শূণ্য রয়েছে। এসব পদের মধ্যে দ্রæত চিকিৎসক পদায়ন না করলে সাগরপারের তিন লক্ষাধিক মানুষ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছেন। আর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবা নিবে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক জেএইচ খান লেলিন জানান, চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল সংকট পুরণে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শিহাব