ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে পারে বাংলাদেশের প্রথম ‘হেলথ সিটি’: কবির আহমেদ ভূইয়া

মো:সাইফুল ইসলাম আখাউড়া

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ২৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৩:০৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে পারে বাংলাদেশের প্রথম ‘হেলথ সিটি’: কবির আহমেদ ভূইয়া

পরিকল্পিত উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বৈপ্লবিক সম্ভাবনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত বিগত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি, দক্ষ চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল রূপান্তর এই অগ্রগতিকে আরও দৃশ্যমান করে তুলেছে। 

তবে এখনো সাধারণ মানুষের জন্য মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য নয়। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-পরিকল্পনার অভাব এবং চিকিৎসার তুলনায় অতিরিক্ত আবাসিক ব্যয়।

চিকিৎসার চেয়ে বেশি খরচ আবাসনে:
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে কেবিন ভাড়া প্রতি রাত ৬ থেকে ১৫ হাজার টাকা, এমনকি তারও বেশি। অথচ প্রকৃত চিকিৎসা খরচ অনেক সময় এই আবাসিক ব্যয়ের চেয়ে কম হয়। ফলে, চিকিৎসা গ্রহণ সাধারণ মানুষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়ে—বিছানার অভাবে রোগীদের বারান্দা বা মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। সঙ্গে থাকা স্বজনদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত আবাসন, যা তাদেরকেও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে।

এই পরিস্থিতির কারণে উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিদেশমুখী হন। এমন বাস্তবতায় দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণের আস্থা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে একটি পরিকল্পিত স্বাস্থ্যনগরী বা ‘হেলথ সিটি’ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

চেন্নাই মডেল: পরিকল্পিত স্বাস্থ্যের প্রতিচ্ছবি-

ভারতের চেন্নাই শহর একটি আদর্শ ‘হেলথ সিটি’র উদাহরণ। সাশ্রয়ী আবাসন, আধুনিক হাসপাতাল, এবং চিকিৎসাকেন্দ্রিক অবকাঠামো সেখানে দেশি-বিদেশি রোগীদের আকৃষ্ট করে। এটি প্রমাণ করে—স্বাস্থ্যসেবা কেবল চিকিৎসা নয়, বরং একটি সমন্বিত পরিকল্পনার ফসল।

কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া?

ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বাংলাদেশের প্রথম ‘হেলথ সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে-

পর্যাপ্ত খালি জমি ও কম খরচে অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ভারতের সীমান্তবর্তী অবস্থান; আগরতলা, শিলং ও কলকাতা থেকেও রোগী আকর্ষণের সম্ভাবনা।

আগরতলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্ব।

এই ভৌগোলিক ও অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল হাবে রূপান্তরের বাস্তবতা এনে দিয়েছে।

নেতৃত্বে আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া:

এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পেছনে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবক আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া। তার ভাষায়,“এই জেলার মানুষকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য আর বাইরে ছুটতে হবে না—বরং দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসবে।”

তিনি বিশ্বাস করেন, তিনটি স্তম্ভ—বিনিয়োগ, নীতিগত সহায়তা ও জনসচেতনতা-এই উদ্যোগের মূল চালিকাশক্তি। তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে এই পরিকল্পনার পক্ষে জনমত গঠনের কাজ শুরু করেছেন।

৪০ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যস্বপ্ন :
প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। এই জনসম্পদ যদি সম্মিলিতভাবে হেলথ সিটির উদ্যোগে যুক্ত হয়, তবে এটি শুধু একটি জেলার উন্নয়ন নয়—পুরো দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের রূপান্তরের ভিত্তি হতে পারে।

সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সমন্বয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্যনগরী—যেখানে চিকিৎসা হবে সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও আন্তর্জাতিক মানের।

সংকল্প ও ঐক্য থাকলে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার নতুন যাত্রা শুরু হতে পারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেই।

মুমু

×