ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

ভাঙনে ১২৫ বর্গ কিমি দ্বীপ এখন  ৬২ বর্গ কিমি

সমুদ্রের লোনা পানির ঢেউয়ে ভাঙছে কুতুবদিয়া

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০১:১৭, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

সমুদ্রের লোনা পানির ঢেউয়ে ভাঙছে কুতুবদিয়া

কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিমাংশে প্রতিবছর অস্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করে সমুদ্রের লোনা পানি

সমুদ্রের লোনা পানির ঢেউয়ে কেবলই ভাঙছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। এক সময়ে ১২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুতুবদিয়া দ্বীপটি ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে ৬২ বর্গকিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানি প্রবেশ করে লবণের মাঠ, কৃষি জমি ও লোকালয়ের ব্যাপক ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে। দ্বীপটি এখন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। কুতুবদিয়ার চারপাশে বিশেষ করে পশ্চিমাংশে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে আগামীতে এ দ্বীপটি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বছর বছর বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ হয় ঠিকই। কিন্তু বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে বালির বাঁধের মতো তা তলিয়ে যায়। সামনে বর্ষা মৌসুম। প্রতিবারের ন্যায় এবারও পশ্চিমাংশ দিয়ে সমুদ্রের লোনা পানি ঢোকা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২ লক্ষাধিক মানুষের জনবসতি রয়েছে এই দ্বীপে। দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে এবারও আওয়াজ উঠেছে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের। এর পাশাপাশি সন্দ্বীপের মতো এ দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগে ফেরি সার্ভিস চালু করারও দাবি উঠেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলায় এবং জেলা শহর কক্সবাজারে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সভা-সমাবেশ হচ্ছে।

কিন্তু এসব সভা-সমাবেশের বক্তব্য সরকারের উঁচু মহলের কর্ণকুহরে পৌঁছুবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। বিগত সরকার আমলে এ দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এক সময়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল ছিল। এ পথে জাহাজ কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ঘাটে থেমে যাত্রীদের ওঠানামা করত। সেদিন এখন আর নেই। এ পথে উজানটিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নৌরুট ভরাট হয়ে ছোট হয়ে যাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ইতোমধ্যে স্থলপথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। এ সড়ক ব্যবস্থা চকরিয়া মগনামা ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। এরপর ডেনিশ বোট বা স্পিডবোটে বোটযোগে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হতে হয় যাত্রীদের। যাত্রী পারাপারের এ ব্যবস্থা উন্নত নয় এবং প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। 
একদিকে কুতুবদিয়া দ্বীপের ভাঙন রোধে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, অপরদিকে যাতায়াত ব্যবস্থায় মগনামা থেকে কুতুবদিয়া ফেরি সার্ভিস প্রবর্তনের জন্য এলাকাবাসী সোচ্চার হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র কোনো বক্তব্য এখনো আসছে না। বিষয়টি দ্বীপবাসীর জন্য দুঃখজনক। অবিলম্বে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার জন্য দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।

×