
টানা খরার কবলে পড়েছে রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চল
টানা খরার কবলে পড়েছে রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন। মানবকুলের পাশাপাশি হাঁসফাঁস অবস্থা পশুপাখিরও। টানা তাপপ্রবাহে গাছেই শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। সকাল থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত ঘরে বাইরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মানুষ এখন এক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই করছে। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল ২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর থেকে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক গাউসুল আজম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার বেলা ৩ টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এদিন সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি জানান, এর আগের দিন শুক্রবার ও তার আগের দিন বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। এখনো তাপমাত্রা ৪০ না ছুঁলেও ছুঁই ছুঁই করছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রির ঘরে ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে চলমান টানা খরায় আম ও লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এতে ফিকে হতে শুরু করেছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন। কৃষি অফিস বলছে, আম-লিচুর গুটি রক্ষায় পানি সেচ ও পানি স্প্রে করতে হবে গাছে। তবে বৃষ্টির পানি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছে ফল গবেষণা কেন্দ্র। গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাপপ্রবাহের কারণে আমের বোঁটার আঠা শুকিয়ে যাচ্ছে। বোঁটায় রস না থাকায় গুটি ঝরছে।
রাজশাহীর চাষিরা বলছেন, এ বছর বাগানগুলো আমের ৯০ শতাংশ মুকুল এসেছিল। মুকুলগুলো ঝরে গিয়ে আবার নতুন করে পাতা বের হয়েছে। ফলে আমের গুটি টিকছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এই আম টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে গেছে। কারণ শুরু হয়েছে মাঝারি তাপপ্রবাহ।
জেলার পবা উপজেলার আম চাষি সরকার দুলাল বলেন, খরার কবলে বেশি ক্ষতি হয় আমের। কারণ খরার কারণে আমের বোঁটা শুকিয়ে থাকে। এরপর হাল্কা বাতাস হলেই ঝরে পড়ে। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমের গুটি টিকে যাবে।
একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একটি বাগানের ৫৫টি গাছ তিন বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন তিনি। এবার গাছে মুকুল এসেছিল মোটামুটি। মুকুল থেকে গুটিও হয়েছিল ভালোই। কিন্তু খরার কারণে এখন ঝরে যাচ্ছে গুটি। গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় আমের গাছ স্প্রে করা সম্ভব না। নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করছি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
রাজশাহী কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, চলামান তাপপ্রবাহে আমের ক্ষতি হবে, গুটি ঝরবে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে যাবে। বৃষ্টিপাত হলে আমের গুটি ঝরা কমে যাবে। আমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে আমের গুটি ঝরা রোধে গাছের গোড়ায় সেচ ও গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।
এদিকে সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকেই যেন আগুন ঝরাচ্ছে সূর্য। এমনই তা তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। তাপপ্রবাহের কারণে দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়ক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষকে ক্লান্ত শরীরে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে দেখা যায়। অনেককে আবার চোখেমুখে ঠা-া পানি দিতে দেখা যায়। তবে রিক্সা চালকদের তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই রিক্সা চালাতে দেখা গেছে। সড়কে কমেছে যানবাহনের চলাচলই। এ ছাড়া তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া অন্য পেশার মানুষেরাও।
সংশ্লিষ্টরা বরছেন, এবার এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহে পুড়ছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল। গরম বাতাস যেন শরীরে বিঁধছে আগুনের হল্কার মতো। এ বছর মৌসুমের প্রথমেই মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এতে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে মানবকুলে।