
বেজিং সরকারের আগ্রহের প্রতিফলন
সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলায় চীন সরকারের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন
হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনার স্থান হিসেবে প্রস্তাবিত হয়েছে নীলফামারী জেলা। এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে এবং আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হবে। রবিবার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর দারোয়ানী নামক স্থানে ৫৩ একর সরকারি খাস জমি পতিত রয়েছে। সেখান থেকে ২৫ একর জমি চীনা হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। যা সকল দিকে থেকে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মহম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশন নীলফামারীর দারোয়ানীর খাস জমি এলাকাটি পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি জমির হালহকিত সব কিছু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নীলফামারীর স্থানটি চীনা হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত করা হয়েছে।
সূত্রমতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের উপসচিব শাহীন আক্তার সুমীর স্বাক্ষরিত একটি পত্র ১৭ এপ্রিল ইস্যু করা হয়। সেখানে বলা হয় সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা চীন সফর করেছেন। উক্ত সফরে চীন সরকার বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিময়/সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যার অংশ হিসেবে দেশের উত্তরবঙ্গে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণসহ একটি চিকিৎসা হাব গড়ে তোলার কথা সরকার বিবেচনা করছেন।
উক্ত হাসপাতাল নির্মাণসহ চিকিৎসা হাব গড়ে তোলার নিমিত্তে সৈয়দপুর বিমানবন্দর সংলগ্ন কাছাকাছি/সম্ভব কম দূরত্বে রংপুর বা তার আশপাশে জেলার খাস অথবা যে কোনো সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন অন্তত ২৫ একর জমি প্রয়োজন, যা জরুরি ভিত্তিতে জানাতে বলা হয়। ফলে বিভাগীয় কমিশনার রংপুর সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে নীলফামারীর দারোয়ানী নামক স্থানটি পরিদর্শন শেষে প্রস্তাবনা প্রেরণ করেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেছেন চীনা হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলায় প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে এবং আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। জানা যায় চীনের একটি প্রতিনিধি দলও নীলফামারীর স্থানটি সরেজমিন দেখে মতামত দিয়ে গেছেন। এই উদ্যোগকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা ‘স্বাস্থ্য খাতের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এটি একটি বড় মাইলফলক হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাবেন নিজ এলাকাতেই, যা ঢাকা বা বড় শহরগুলোর ওপর চাপ কমাবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, চীনের উপহার এক হাজার বিছানার বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে স্থান নির্ধারণে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে হাসপাতালটি তিস্তা অববাহিকা অঞ্চল। যা চীনের বেঁধে দেওয়া কিছু শর্তকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বিশেষ সুবিধা হলো সৈয়দপুরে বিমানবন্দর রয়েছে। চীন এটাই দেখছেন। পাশাপাশি নীলফামারীর দারোয়ানী থেকে উত্তরা ইপিজেডের দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। এই ইপিজেডে রয়েছে প্রায় ছয়শ’ চীনা নাগরিক। যা ইপিজেডে কর্মরত।
সূত্র মতে নীলফামারীতে চীনা হাসপাতাল নির্মিত হলে অনেক রোগী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আনা যাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে। সড়ক পথে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সঙ্গে নীলফামারীর মহাসড়ক সংযুক্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেপাল, ভুটানের রোগীরা সড়ক পথে এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সহজে বিশেষায়িত হাসপাতালের নিকটতম সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। এ ছাড়া তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীন যেহেতু বাস্তবায়ন করবে সেহেতু তিস্তা নদীপথে রাখা হবে স্পিটবোড অ্যাম্বুলেন্স। ঘাটে ভিড়ে রোগীকে হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স করে বিশেষায়িত হাসপাতালের অবতরণ করতে পারবে কম দূরত্বের মধ্যেই।
এ ছাড়া রেলপথ ব্যবস্থা থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালটির স্থান হিসেবে নীলফামারীর দারোয়ানী এলাকার জমিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চীনের বিশেষায়িত হাসপাতালে যে সুবিধা থাকবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় তা হলোÑ এটা একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেইজড হসপিটাল হবে। যেখানে বাংলাদেশসহ নেপাল, ভুটান ও ভারতের লোকজন চিকিৎসা করতে আসবেন। যাকে টারশিয়ারি হাসপাতাল বলা হয়। বিষয়টি হলো এমন যে সমস্ত জটিল রোগের জন্য রোগীদের বাইরের দেশে যেতে বলা হয় সেই সমস্ত অত্যাধুনিক টার্মিনাল কেয়ার বেইজড উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে এই বিশেষায়িত হাসপাতালে।
যেমন নিউরো সার্জারি, নিউরোলজি, কিডনি বা নেফ্রলজি, ক্যান্সার, ব্রেস্ট ইনফারলিটি, ইউরোলজি হ্যাঁ কার্ডিলজি ডিপার্টমেন্টসহ লিভার কিডনি বনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ও হার্টের সমস্ত বড় বড় অপারশন ট্রান্সপ্লান্টেশন এই সমস্ত রোগের জন্য এসব হাসপাতাল।