
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে খোলা ট্রাকে পরিবহন করা হচ্ছে স্ক্র্যাপ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মৃত্যুকূপ তৈরি করছে স্ক্র্যাপবাহী পরিবহন। নিয়ম ভেঙে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্ক্র্যাপ বহনকারী ধাতব পণ্যবাহী এসব পরিবহন। সড়কে ঝাঁকুনির সময় অথবা গাড়ির ওপরে থাকা ধারালো ধাতব বস্তু বাতাসের তোড়ে সড়কে পড়ে অন্য গাড়ির চাকা পাংচার করে ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি একটি স্ক্র্যাপবাহী খোলা ট্রাক পুলিশের গাড়ির ওপর উল্টে পড়ে।
এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ আহত হন পাঁচজন। পুলিশের ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। একটি বাসের দুটো চাকা নষ্ট হয়ে যায়। এমন ঘটনা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিত্য ব্যাপার। দিন দিন এসব গাড়ি যেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তেমনি লাগাম টানারও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আতঙ্কে আছেন সবাই।
জানা গেছে, দেশের অসংখ্য রি-রোলিং মিলের জন্য স্ক্র্যাপ লোহা মহাসড়কে পরিবহন করা হয়। এসব স্ক্র্যাপ খুবই বিপজ্জনক। নিয়মানুযায়ী কন্টেনারের ভেতর আবৃতাবস্থায় পরিবহন করার কথা থাকলেও স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী কিংবা কিছু রি-রোলিং মিল মালিক কোনো নিয়ম-কানুন না মেনে কম টাকায় পরিবহনের জন্য খোলা ট্রাকে করে পণ্যগুলো মহাসড়কে পরিবহন করছে।
এতে কোথাও কোথাও ঝাঁকুনির সময় ট্রাক থেকে লোহা সড়কে পড়ে অন্য গাড়ির চাকা ছিদ্র হওয়াসহ নানান দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রায়ই জানমালের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এরপরও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি স্ক্র্যাপ বোঝাই করে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে।
সীতাকু--মীরসরাই বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন লরি ও ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন কারখানায় স্ক্র্যাপ নিয়ে আসা হয়। উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়ন অতিক্রমকালে চোরের একটি সিন্ডিকেট লরি ও ড্রাম ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ লোহা নামিয়ে ফেলে। সম্প্রতি একটি ড্রাম ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ নামানোর সময় পেছন থেকে আরও একটি গাড়ি একটি কিশোরকে চাপা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া এসব স্ক্র্যাপের ধারালো ও ভাঙা অংশ মহাসড়কে পড়ে অনেক গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও, কোনো প্রতিকার মিলছে না। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইয়াছিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভিযোগ করে সাধারণ মানুষের কোনো লাভ হয় না। দু-এক টুকরো স্ক্র্যাপ রাস্তায় পড়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ক্ষতি হলেও কারও কিছু যায় আসে না। অন্তত খোলাভাবে স্ক্র্যাপগুলো যাতে বোঝাই না করা হয়, সেটুকু নিশ্চিত করা হোক। যাত্রীবাহী উত্তরা বাসের চালক জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়তই গাড়ির সামনের ধাতব কোনো বস্তু বা চাকায় পেরেক ঢুকে পাংচার হচ্ছে। মহাসড়কের এই রকম দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটলেও মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগে নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে ভাটিয়ারীর একটি রি-রোলিং মিল ব্যবস্থাপক আবুল কালাম জানান, এসব স্ক্র্যাপ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়। মিলে ঢোকার আগ পর্যন্ত এগুলোর দায়িত্ব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুধু স্ক্র্যাপ না, কোনো পণ্যই খোলা অবস্থায় বহন করা উচিত নয়। এতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সম্প্রতি সীতাকু-ের পন্থিছিলা এলাকায় স্ক্র্যাপবোঝাই একটি ড্রামট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিভাজকের উঠে পুলিশের গাড়ির ওপর পড়ে। এতে দুই পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে খোলা ড্রাম ট্রাকে স্ক্র্যাপ লোহা বহন না করতে নির্দেশনা রয়েছে। তবুও বিষয়টি মানা হচ্ছে না। এটি আমরা খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।