ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নানা সমস্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ২১:২৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নানা সমস্যা

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে থামছে না দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। এর নেপথ্যে মদত দিচ্ছেন খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ডা. হাবিবুর রহমান শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে একশ্রেণির দালাল চক্র নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবার অন্যতম ভরসাস্থল শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল। কিন্তু এ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য, কতিপয় ডাক্তারের স্বেচ্ছাচারিতা, অফিসের সময় হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখা ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আড্ডা করা, যন্ত্রপাতির সংকট ও সর্বোপরি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। যেসব যন্ত্রপাতি আছে তা কিছুদিন পর পর অচল হয়ে পড়ে থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আর এই সুযোগে কমিশনভোগী একশ্রেণির অসাধু চিকিৎসক রোগীদের রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষার জন্য তাদের পছন্দের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছেন। তা ছাড়া, তালিকা অনুযায়ী রোগীদের খাবার সরবরাহ না করে স্বল্প ও নিম্নমানের খাবার দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।  
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, আমরা অনেকবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এসেছি এবং জনগণের কাক্সিক্ষত যেই সেবা সেটি যেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, সেজন্য আমরা বারবার তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, দেখি ডাক্তার যারা ডিউটিতে আছে, তাদের রুম তালামারা, ডাক্তার অফিসে থাকে না ঠিকমতো। ইমরান আল নাজির আরও বলেন, আমরা দেখেছি যে, হাসপাতালের ডাক্তাররা গড়ে তুলেছে বাইরে ক্লিনিক, সেই ক্লিনিকের ডাক্তাররাই আবার হাসপাতালে চাকরি করছেন। ডাক্তাররা যদি এক একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন তাহলে মানুষ কিভাবে তাদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাবে? হাসপাতালে নিয়মের কোনো বালাই নাই। এ বিষয়গুলো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আমরা বারবার জানিয়েছি, কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের অপসারণের দাবি তুলবেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইমরান আল নাজির।   
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তারা কেবল চিকিৎসক দেখানো ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনে রোগীর এক্স-রেসহ নামমাত্র কিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য উন্নত পরীক্ষার জন্য নেই সিটিস্ক্যান, এমআরআই, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকার পরও অধিকাংশ সময় ফিল্ম না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুই-তিন গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় প্রতিদিন রোগীদের লম্বা লাইন লেগেই থাকে। এসব বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আপনারা এসে দেখে যান। সপ্তাহে ৩ দিন সকালে আধাঘণ্টা করে ওষুধ কোম্পানির লোকদের ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দিয়েছি। অন্যজনের কথা বিশ^াস করেন কেন? সবসময় অফিসে থাকা যায় না। বাইরে আমাদের অনেক কাজ আছে। 

প্যানেল

×