ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

বন্যহাতির আক্রমণের ভয়ে আধাপাকা ধান কাটছে কৃষক

এম. সুরুজ্জামান, সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

বন্যহাতির আক্রমণের ভয়ে আধাপাকা ধান কাটছে কৃষক

ছবি: জনকণ্ঠ

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে সোনার ফসল বাঁচাতে আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। গত প্রায় এক মাস যাবত উপজেলার পোড়াগাঁও, নয়াবিল ও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার গোপে রোপিত বোরো ধানক্ষেতে তাণ্ডব চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে আসছে বন্যহাতির দল।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের পাহাড়ি গোপে কৃষক-কৃষাণীরা দলবেঁধে তাদের আধাপাকা বোরো ধান কাটছেন। তারা জানান, প্রায় ৪০/৫০টি বন্যহাতি প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে খাবারের সন্ধানে বোরো ধানক্ষেতে নেমে এসে ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করছে। এতে তাদের সোনার ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই যেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে, সেসব ধান কাটা শুরু করেছেন।

এলাকার কৃষকরা ধান রোপণের পর থেকেই দিনের বেলায় টং ঘরে বসে এবং রাতের বেলায় মশাল জ্বালিয়ে ডাকচিৎকার করে ফসল রক্ষা করছেন। কিন্তু আবাদের প্রায় শেষ প্রান্তে এসেও হাতির ভয়ে ঠিকমতো পাকা ধান কাটতে পারছেন না।

উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, "আমি পাহাড়ের ঢালে ৭৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে এসে ধানক্ষেত বিনষ্ট করছে। তাই পেটের খোরাকী ও খরচের টাকা তুলতে বন্যহাতির ভয়ে আধাপাকা ধানই কেটে ঘরে তুলছি।"

একই এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, "সারারাত জেগে হাতি তাড়ানোর কারণে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। এজন্য আমরা দিনের বেলায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না।"

কৃষাণী রত্না আক্তার বলেন, "বন্যহাতির দল আগে রাতের বেলায় বোরোক্ষেতে নেমে আসতো। আর এখন দিনের বেলাতেও এসে ধান খেয়ে সাবাড় করছে। হাতিরা এখন আর কোনো কিছুতেই ভয় পায় না। এমনকি কোনো বাধাও মানে না। আমরা বন্যহাতির ভয়ে ছোট ছোট সন্তানাদি নিয়ে রাত জেগে বসে থাকি। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।"

ওই এলাকার কৃষক আয়নাল হক বলেন, "আমার দুটি বসতঘর গুড়িয়ে দিয়েছে বন্যহাতি। আমি এর কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।" একই কথা জানান কৃষাণী রাবিয়া বেগম। তিনিও ফসলের ক্ষতিপূরণ পাননি।

ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, "বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।"

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, "নিয়ম হলো শতকরা ৮০ ভাগ পাকলে ধান কাটতে হয়। কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যহাতির তাণ্ডব চলছে। তাই ওই এলাকার কৃষকের জমির ধান যদি শতকরা ৬০ ভাগ পাকে, তাহলে তাদের ক্ষেতের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে অন্তত কৃষকরা খোরাকীর ধান ও খরচের টাকা উঠাতে পারবেন।"

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, "গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডব এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে বনবিভাগের মাধ্যমে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।"

এম.কে.

×