
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পাঁচ লাখের ও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য আধুনিক প্রায় সব ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু জনবল সঙ্কট আর অবহেলার কারণে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী সংকটে এলাকাবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালটিতে ৫০ শতাংশ জনবল না থাকায় রোগীদের পরীক্ষা-নীরিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ সুযোগে ফায়দা লুটছে উপজেলা সদরে থাকা মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গুলো।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হুমায়ুন, বেলাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, জান্নাত বেগম, হাসিনা বানু সহ অন্তত ৭ জন রোগী জানান, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত বা হাড়ভাঙা রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলেও গত ১৪ বছরে তারা এক্স-রে কিংবা ইসিজি সেবা পায়নি। সম্প্রতি এগুলো চালু হলেও এখনও কাঙ্খিত সেবা মিলছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে গিয়ে এসব পরীক্ষা করাতে হয় রোগীদের। আর এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০জন জুনিয়র কনসালটেন্টের মধ্যে ৪ জনের পদই শূণ্য, মেডিকেল অফিসার তিন জনের মধ্য তিনটি পদ শূণ্য, প্রধান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক, হিসাবরক্ষক, ক্যশিয়ারে একটি করে পদ, অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটরের দু‘টিসহ মোট ৫টি পদ শূণ্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওথেরাপি) পদ শূণ্য থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি বছরের পর বছর বন্ধ থাকার পর গত প্রায় এক বছর পূর্বে সপ্তাহে দু‘দিন মেশিনটি চালু থাকলেও বর্তমানে কারিগরি ক্রটির কারণে গত দু‘মাস থেকে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আর আগে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সপ্তাহে দু‘দিন এসে রোগীদের আলট্রাসনোগ্রাম করাতেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) কাগজে-কলমে থাকলেও তিনি গত প্রায় ২বছর যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা যায়। জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) না থাকায় অপারেশন রোগীদের অজ্ঞান করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকতে দেখা যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দারোয়ান/সিকিউরিটি গার্ডের দু‘টি পদের মধ্যে দু‘টি পদই শূণ্য থাকায় হাসপাতালটি নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। ৫জন পরিচ্ছন্নতকর্মীর মধ্যে ২জনের পদ শূণ্য থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্নস্থানে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ-সার্জারী) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ১জন, প্যাথলজিষ্ট ১জন, মেডিকেল অফিসার ১জন, মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) ১জন, মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) ১জন, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ৫জন, প্রধান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক ১জন, হিসাব রক্ষক ১জন, ক্যাশিয়ার ১জন, স্টোর কিপার ১জন, ফার্মাসিষ্ট ১জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিওথেরাপি) ১জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ডেন্টাল) ১জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২জন, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২ জন, স্বাস্থ্য সহকারি ৪জন, সহকারি নার্স ১জন, টি.এল.সি.এ ১জন, ড্রাইভার ১জন, কম্পাউন্ডার ১জন, কার্ডিওগ্রাফার ১জন, জুনিয়র মেকানিক ১ জন, ও.টি বয়/ও.টি এটেনডেন্ট ১জন, অফিস সহকায়ক ৩জন, ওয়ার্ড বয় ২জন, কুক/বাবুর্চি ১জন, আয়া ১জন, পরিচ্ছন্ন কর্মী ২জন, মালী ১জন, দারোয়ান/সিকিউরিটি গার্ড ২ জন ও ল্যাব এটেনডেন্ট ১জনের পদ শূণ্য রয়েছে।
এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বিষয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়েছে। সরকার জনবল নিয়োগ দিলে আমরা জনবল পাবো।
রিফাত