
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
রাজবাড়ী জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ৯টি নদী ও ৫৪টি খাল। কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে এসব নদী-খাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি এবং গ্রীষ্মকালে নদী-খালের পানি কৃষকদের সেচের মূল ভরসা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা, যমুনা ও গড়াই নদী ছাড়া অন্যান্য নদী ও খালগুলো প্রায় শুকিয়ে যায়। ফলে কৃষিতে নেমেছে সংকট, দেখা দিয়েছে পানির ঘাটতি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা, যমুনা ও গড়াই নদী ছাড়া বাকি ৬টি নদী ও ৫৪টি খাল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছেন। এতে উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি পানির স্তর নেমে গিয়ে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কালুখালী উপজেলার দোয়ারিয়া গ্রামের চাষি নিরঞ্জন কুমার দাস বলেন,“চার মাস নদীতে পানি থাকে, বাকি পাঁচ-ছয় মাস একেবারে শুকিয়ে যায়। মেশিনেও পানি উঠে না। নদীতে যদি গভীর করে কাটতো, তাহলে বছরজুড়ে পানি থাকতো।
চাষি হাতেম আলী বলেন,“নদীতে পানি নেই, মেশিন থেকেও পানি উঠছে না। পানির অভাবে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। যেখানে ৫০ মণ পেঁয়াজ হওয়ার কথা, সেখানে হচ্ছে মাত্র ২০ মণ।”
চন্দনী ইউনিয়নের চাষি ফিরোজ শেখ বলেন, “আমাদের চত্রা নদীতে এখন পানি নেই। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য মেশিন চালিয়ে খুব সামান্য পানি উঠছে। নদী-খাল খনন করে পানি সংরক্ষণ করলে আমাদের অনেক উপকার হতো।”
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম রাসুল বলেন, “শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় যখন পানি কমে যায়, তখন ছোট নদী ও খালগুলোও শুকিয়ে যায়। এতে করে কৃষকেরা সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না। পানির স্তর যেভাবে কমছে, তা দীর্ঘমেয়াদে বড় সমস্যা তৈরি করবে।”
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া জানান, “নদীগুলোতে নাব্যতা একদমই নেই। বর্ষাকালে যে পানি আসে তা ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানিও ঠিকভাবে রিচার্জ হচ্ছে না। ফলে পানির সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। নদী-খাল খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হবে।”
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম.এ শামীম বলেন,“পদ্মা, যমুনা ও গড়াই ছাড়া রাজবাড়ীর অন্যান্য ছয়টি নদীর পানির উৎস পদ্মা ও গড়াই নদী। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা ও গড়াইয়ের পানির স্তর ছোট নদীগুলোর তুলনায় অনেক নিচে চলে যায়। তাই এই সময়ে ছোট নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে।”
রাজবাড়ীর কৃষি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও বিশেষজ্ঞরা। নদী ও খালগুলো খনন করে বছরজুড়ে পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামীতে খাদ্য উৎপাদন ও পানির টেকসই ব্যবস্থাপনায় ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফারুক