
বরিশালের আদালতগুলোতে মামলা জট দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিচারক, এজলাস এবং অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে হাজারো মামলা। ফলে আদালতের বারান্দা হয়ে উঠেছে বাদী-বিবাদীদের প্রজন্মান্তরের দীর্ঘশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
বানারীপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ওমর ফারুক (৫০) এক জমিজমা সংক্রান্ত মামলার রায় পেতে অপেক্ষা করছেন দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে। তার দাদা ও পিতা ছিলেন এই মামলার আগের পক্ষ। এখন তিনি নিজেই ঘুরছেন বরিশালের আদালতের বারান্দায়।
তিনি বলেন, “তিন পুরুষ ধরে শুধু টাকা খরচ আর আদালতের চক্করই কপালে জুটছে। এখনো সেই মামলার কোনো কূলকিনারা নেই।”
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান গৌরনদী উপজেলার সিংগা গ্রামের ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, “২০১৪ সালে একটি মামলা করেছি। এখন সেই এক বিষয় নিয়ে চারটি মামলা চলছে। রায় তো দূরের কথা, শুনানিই ঠিকমতো হয় না। মামলা চালাতে চালাতে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের বিভিন্ন আদালতে প্রায় ৪৫ হাজার মামলা এখনো বিচারাধীন। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইজন বিচারক ও দুটি এজলাসের সংকট রয়েছে। জজ কোর্টেও বিচারক না থাকলেও পাঁচটি এজলাস সংকটে রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আদালত চত্বরে ট্রাইব্যুনালগুলোতেও রয়েছে বিচারক, খাসকামরা ও বসার জায়গার তীব্র সংকট। ফলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছেই।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নাজির কামরুল হাসান বলেন, “মহানগর দায়রা জজ আদালতের নিজস্ব ভবন না থাকায় কার্যক্রম অন্যত্র বসে চালানো হচ্ছে। অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো দূর করা গেলে মামলা জট অনেকটাই কমে আসবে।”
তবে শুধু অবকাঠামো নয়, দুর্নীতিকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত দুর্নীতির চক্র মামলার নিষ্পত্তিকে বিলম্বিত করছে।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হাফিজ আহমেদ বাবলু বলেন, “হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের মতো এখন যেকোনো মামলা অনলাইনে করলে দুর্নীতি কমবে, ছুটির দিনেও কার্যক্রম চালানো যাবে। এতে মামলার জট দ্রুত কমানো সম্ভব হবে।”
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাদিকুর রহমান লিংকন বলেন, “মামলা জট কমাতে হলে শুধু অবকাঠামো নয়, নতুন বিচারক নিয়োগ, এজলাস ও বসার ব্যবস্থাও বাড়াতে হবে। তা না হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে।”
নুসরাত