
ছবি : সংগৃহীত
২০২৫ সালের শুরুটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক গভীর অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনার সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তপ্ত সম্পর্ক আবারও নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে। কাশ্মীরের পেহেলগ্রামে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, আর ভারতীয় মিডিয়া ও সেনাবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঠিক এই সংকটময় মুহূর্তেই দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বাংলাদেশ- একটি দেশ যা এতদিন আঞ্চলিক কূটনীতির পেছনের কুশীলব ছিল, আজ তা হয়ে উঠেছে একটি নির্ণায়ক শক্তি।
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসন ঘোষণা করেছে ‘মেড ইন ঢাকা’ নামক একটি পররাষ্ট্রনীতি, যা দক্ষিণ এশিয়ায় এক নবযাত্রার ইঙ্গিত দেয়। এই নীতির মূলে রয়েছে ভারসাম্য রক্ষা—ভারত, চীন, পাকিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে সমান কূটনৈতিক দূরত্ব বজায় রেখে সম্পর্ক গড়ে তোলা। এই পদক্ষেপ শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকেই নয়, গোটা আন্তর্জাতিক মহলকেই চমকে দিয়েছে।
এই নতুন পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের প্রাথমিক চিত্র ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ চুক্তি, তুরস্কের সঙ্গে ড্রোন প্রযুক্তি বিনিময়, ইরানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন এবং রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ আজ একটি বৈশ্বিক স্ট্রাটেজিক খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো যেমন আলজাজিরা, রয়টার্স ও দ্য হিন্দু বাংলাদেশকে ‘কিংমেকার’ বা 'ক্ষমতার নির্ধারক' হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
তবে এই উদীয়মান ভূরাজনৈতিক অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই কিছু দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের দৃষ্টিতে, বাংলাদেশের এই বহুমুখী কৌশল তাদের আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। দিল্লি প্রকাশ্যে জানিয়েছে—যদি বাংলাদেশ তাদের "বন্ধু" হতে চায়, তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা চলবে না। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সম্প্রতি নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সঙ্গে নিয়ে একটি ‘নতুন মুসলিম দক্ষিণ এশিয়া’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন, যা ভারতকে আরো শঙ্কিত করে তুলেছে। অনেক পর্যবেক্ষক একে 'দুই জাতি তত্ত্বের' পুনরুত্থান বলেও উল্লেখ করছেন।
বাংলাদেশ সরকার এ অবস্থায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, তারা কোনো দেশের আনুগত্যে বিশ্বাস করে না। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তারা জাতীয় স্বার্থকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। গোপন গোয়েন্দা রিপোর্টগুলোতে দেখা গেছে, ভারত বাংলাদেশের এই স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে, বিশেষ করে যদি এটি পাকিস্তান-চীন-তুরস্ক অক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়।
এমন এক সময়ে, যখন যুদ্ধের দামামা শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অবস্থানই হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সংঘাতের মাঝখানের সূক্ষ্ম রেখা। এশিয়া টাইমসের মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ যদি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চলতে পারে, তাহলে এটি পুরো অঞ্চলের সম্ভাব্য শান্তির স্থপতি হতে পারে। তবে, একটি ভুল সিদ্ধান্ত গোটা উপমহাদেশকে টেনে নিতে পারে একটি নতুন সংঘর্ষে।
অতএব, আজ বাংলাদেশের প্রতিটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ কেবল একটি দেশের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশের হাতে এখন এমন এক ইতিহাস গঠনের সুযোগ এসেছে, যেখানে দেশটি শুধু নিজের অবস্থান নয়, একটি অঞ্চলের ভাগ্যকেই প্রভাবিত করতে পারে।
সূত্র:https://youtu.be/iftEEngkxtk?si=Pd3sgEHrAxpQVDjA
আঁখি