
ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দাবি করে বলেছেন, দেশের জনগণ এখন সাফার করছে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিনিধি না থাকার কারণে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়ে নিজেদের স্বচ্ছতা দেখিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।
এতে জনগণ যদি সন্তুষ্ট হয়, তবে জনগণ পরবর্তী খেদমতের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন দেবে। আর এখানে যদি কোনো গলদ ধরা পড়ে তবে জনগণ নির্বাচন কমিশনকে হলুদ নয়, লাল কার্ড দেখাবে। জামায়াত আমির এ সময় আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে তারা নাকি ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন দেশকে উপহার দেবে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত নির্বাচন কমিশনকে এসিড টেস্ট করতে চায়।
জামায়াতের আমির শুক্রবার সকালে জামায়াতে ইসলামীর ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় সার্কিট হাউস মাঠে আয়োজিত এক কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় জামায়াতের আমির ডা. শীফকুর রহমান আরও বলেন, সংস্কারের নামে নারী অধিকার যেসব সুপারিশ করেছে তার বেশ কিছু জায়গায় কুরআন ও সুন্নাহর খেলাপ করা হয়েছে, তারা দেশের সমাজ ব্যবস্থাকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চান তা বলতেও লজ্জা লাগছে-তা কোনোভাবেই নিয়ে যেতে দেবে না জামায়াত।
কারন নারী অধিকার দেশের সাড়ে নয় কোটি মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না বলে মনে করে জামায়াত। অনেকে জানতে চান দেশ যেভাবে চলছে জামায়াত সন্তুষ্ট কীনা-প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, ফিফটি-ফিফটি। তিনি বলেন, জামায়াত মনে করে সরকার চেষ্টা করছে। সকাল সাড়ে ১০টায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান সার্কিট হাউসের সমাবেশস্থলে প্রবেশ করলে ‘নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর ধ্বনীতে’ নেতা কর্মী ও সমর্থকরা প্রকম্পিত করে তোলে। প্রখর রোদের খরতাপ থেকে রক্ষায় সমাবেশস্থলে নকশি করা সামিয়ানা টানিয়ে ও চারপাশে ঘেরাও দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। তারপরও গমগম করা কর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল ছিল ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা।
জামায়াতে ইসলামী ময়মনসিংহ মহানগরের আমির কামরুল হাসান ইমরুলের সভাপতিত্বে শুক্রবারের এই কর্মী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা সামিউল হক, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ময়মনসিংহ মহানগরের নায়েবে আমির আসাদুজ্জামান সোহেল, ময়মনসিংহ জেলা আমির আব্দুল করিম, নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, জামালপুরের জেলা আমির অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল, নেত্রকোনার জেলা আমির মাওলানা সাদিক আহমেদ ফরিদ, শেরপুরের জেলা আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান, কিশোরগঞ্জের জেলা আমির অধ্যাপক রমজান আলী, নেত্রকোনা মদনের অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জামায়াত নেতা মাহফুজুর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ জামায়াত নেতা মাওলানা মঞ্জুরুল হক হাসানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও দুর্নীতি মুক্ত হতে পারেনি। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি মুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত, টেন্ডারবাজি মুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, শোষণহীন, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন এতদিন আমাদের কথা বলার সুযোগ ছিল না। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারী সরকার কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ আজ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে বলেই আমরা প্রকাশ্য সমাবেশ করে কথা বলতে পারছি। নেতৃবৃন্দ বলেন, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের কর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না। আগামীতে বাংলাদেশ হবে জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ। ইনক্লোসিভ বাংলাদেশ গড়তে জামায়াত নেতা কর্মীরা পিছপা হবে না।
ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত জামায়াত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। জামায়াত নিষিদ্ধ করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জামায়াতের কর্মী সভায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতা উৎপল বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে, মা বোনদের ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
অথচ সব সময় এর দায় চাপানো হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানের পর জামায়াত নেতা কর্মীরা সংখ্যালঘুদের পাহারা দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে তারা সংখ্যালঘুদের আপনজন। জামায়াতের এই সভায় খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন ও সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ যোগ দেন।
শুক্রবারের এই কর্মী সমাবেশ সফল করতে ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেবে বাস, পিকআপ ও ট্রেনে করে নেতা কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এ সময় অনেকের হাতে ছিল জামায়াতের দলীয় পতাকাসহ দলের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য শুরুর আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের বিভিন্ন আসন জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
গত ২০০৩ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের দীর্ঘ ২২ বছর পর জামায়াতে ইসলামী ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে শুক্রবার প্রকাশ্য এই কর্মী সমাবেশ করেছে। ওয়ান ইলেভেনের আগে জামায়াতকে প্রকাশ্য কোনো সমাবেশ করতে দেখা যায়নি ময়মনসিংহে। জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পর ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনে জামায়াত নেতৃবৃন্দ শুক্রবার প্রকাশ্য এই সমাবেশ করতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ।
যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, দুর্নীতি, নির্যাতন, অত্যাচার-জুলুম, নতুন করে জন্ম নেবে না কোনো ফ্যাসিস্ট, বিচারের বাণী কাঁদবে না নীরবে নিভৃতে, বিচার চেয়ে কোনো বিচার প্রার্থীকে আত্মহত্যা করতে হবে না, যেখানে দুর্নীতির কোনো দুর্গন্ধ থাকবে না-সবখানে প্রতিষ্ঠা করা হবে ন্যায়বিচার।