ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

মুন্সীগঞ্জ ও হবিগঞ্জ

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসখা ইউনিয়নের নোয়াগড় গ্রামে শুক্রবার দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জ ও হবিগঞ্জে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষের সময় গুলি বিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণসহ কয়েকটি বসতঘর ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া, হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলি বিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণসহ ছয়টি বসতঘরে ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। তবে, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।  
জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইমামপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের আমিরুল ইসলাম মেম্বার গ্রুপের সঙ্গে লালু-সৈকত গ্রুপের বিরোধ ছিল। এর আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চলতি মাসের ৬ এপ্রিল আমিরুল মেম্বার গ্রুপের হামলায় আহত হন লালু-সৈকত গ্রুপের আল আমিন ও রেণু মিয়া নামে দুজন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি জামিন পায় আমিরুল মেম্বার গ্রুপের লোকজন। পূর্বের ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় ফের সংঘর্ষে জড়ায় উভয়পক্ষ। লালু-সৈকত গ্রুপের লোকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় আমিরুল মেম্বারের লোকজন।

এ সময় সংঘর্ষে আমিরুল মেম্বার গ্রুপের একজন মারা গেছেÑ এমন একটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হলে এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ঘটনার কিছুক্ষণ পর লালু-সৈকত গ্রুপের লোকজন আমিরুল মেম্বার সমর্থকদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় একটি বসতঘরে ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে তারা। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাতভর থেমে থেমে গুলিবর্ষণ এবং ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। 
ঘটনার প্রত্যক্ষর্শী স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, এই দুই গ্রুপের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। কিছুদিন পর পর মারামারি, গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একটু পর পর গুলির শব্দ পেয়েছি আমরা। 
এ বিষয়ে লালু-সৈকত গ্রুপের সৈকত বলেন, বিভিন্ন কারণে আমরা এখন বাড়িতে থাকি না। বৃহস্পতিবার রাতে আমরা বাড়িতে আসব এমন খবরে আমিরুল মেম্বারের নেতৃত্বে তার লোকজন আমাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আমাদের সমর্থক সোহেল, নূর মোহাম্মদ, আহমদ আলী, বাচ্চু ও আলী আহমদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। আমাদের লোকজনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে তারা। 
অভিযোগের বিষয়ে আমিরুল ইসলাম মেম্বার বলেন, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লালু-সৈকত গ্রুপের লোকজন দুই দফা হামলা চালায় আমাদের ওপর। প্রথমবার ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে আমাদের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে আমাদের লোকজন বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে আবারও হামলা চালায় তারা। এ সময় একটি বসতঘর ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। 
গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পুলিশের উপস্থিতির টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা সটকে পড়ে। কত রাউন্ড গুলি হয়েছে তা বলতে পারব না। তবে, আমরা ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা ও পটকা উদ্ধার করেছি। কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কেউ হতাহত হয়েছে বলে জানা নেই। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
হবিগঞ্জ ॥ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ১০ পর্যন্ত উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের নোয়াগড় গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  
আহতদের উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচজনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের বিএনপি নেতা আক্তার মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান মিয়া ওরফে শাজাহান মেম্বারের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত মঙ্গলবার শাজাহান মেম্বারের পক্ষের একজন লোকের পারিবারিক একটি ঝগড়াকে থামাতে গেলে শাজাহান মেম্বারের লোকজন আক্তার মিয়ার পক্ষের একজনকে মারধর করে। 
এ নিয়ে গত দুদিন ধরে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জেরে শুক্রবার সকালে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি এবিএম মাঈদুল হাছান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

×