ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন

ছবিঃ সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলায় উচ্চ আদালতের দেয়া রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানের মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি, নজরুল ইসলামের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ, ছোট ভাই আব্দুস সালাম, নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের, ভাই রাজু আহমেদ ও নিহত গাড়ী চলক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। 
মানববন্ধনে নিহত প্যানের মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, আমার স্বামীর সাথে যে সাতজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আপনারা সবাই দেখেছেন, সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে। সকলে এই হত্যার জন্য কান্না করেছে। সবাই চায় এই বিচারের রায় দ্রুত সম্পন্ন হবে। তিনি আরো বলেন, এখনও রায় কেন ঝুঁলে আছে। আমাদের দাবি আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি ও আইন উপদেষ্টার প্রতি, এই সাতটি পরিবারের দিকে তাকিয়ে এই রায় কার্যকর দ্রুত করুন। আমাদের সাতটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। সার্বিক সহযোগীতা করে আমাদের মামলাটা যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। আমরা যেন বিচার পাওয়ার সান্তনা নিয়ে মরতে পারি। নিহত নজরুল ইসলামের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের মামলাটির বিচার নি¤œ আদালতে রায় হয়ে গেছে। এমনকি উচ্চ আদালতেও রায় হয়েছে। জানিনা কোন শক্তির বলে ও কিভাবে দীর্ঘ ১১টি বছর এ রায়টি কেন ঝুলে আছে। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি নারায়ণগঞ্জের নৃশংস এ সাত খুনের বিচারের রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়ে যায়। আমরা সাতটি পরিবার যেন নিরাপদে থাকতে পারি। নিহত তাজুল ইসলামের পিতা আবুল খায়ের বলেন, বিগত ১১টি বছর অপেক্ষা করতে করতে আজ আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এখন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় আইন উপদেষ্টা, এ্যাটুর্নি জেনারেল এবং প্রধান বিচারপ্রতির কাছে আমাদের আকুল আবেদন এ অপেক্ষার পালা থেকে রেহাই দেয়ার চেষ্টা করেন। সাত খুনে যে রায় হয়েছে সেই রায়টি দ্রুত কার্যকর করে আমাদেরকে একটু শান্তনার বাণী শুনান। আমরা যাতে একটু শান্তনা পাই।
জানা যায়, আলোচিত এ সাত খুনের মামলাটি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ৩৫ আসামির মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, অব্যাহতিপ্রাপ্ত র‌্যাব-১১ সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, কমান্ডার এম এম রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। উচ্চ আদালতে আসামী পক্ষ আপীল করলে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক ৩ কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রাখেন ও ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, নিহত নজরুল ইসলামের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, সহযোগি মনিরুজ্জামান স্বপন, সহযোগী তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর আলম ও আইনজীবি চন্দন সরকারের গাড়ি চালক ইব্রাহিমসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। 

মারিয়া

×