ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

গরুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে মরণব্যাধি লাম্পি, আতঙ্কে কৃষক ও খামারী

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩৩, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

গরুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে মরণব্যাধি লাম্পি, আতঙ্কে কৃষক ও খামারী

ছবিঃ সংগৃহীত

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরুর শরীরে লাম্পি স্কিন ভাইরাস রোগ দেখা দিয়েছে। এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ছোট ছোট প্রান্তিক খামারে। খুরা রোগের চেয়েও ভয়ঙ্কর লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন খামারীরা। আতঙ্কিত হয়ে অনেক খামারী ইতোমধ্যে তাদের গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু দিন ধরে অনেক গরুর শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসজনিত এই ছোঁয়াচে রোগ। এ কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গরুর মালিক কৃষক ও খামারীরা। তবে এই রোগ প্রতিরোধে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগও নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক আক্রান্ত গরু, বিশেষ করে বাছুর নিয়ে আসছেন চিকিৎসার জন্য।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর গায়ে ছোট ছোট গুটি উঠে ও ফুলে যায়, পা ফুলে যায়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা হয়। এই রোগ মানুষের মধ্যে না ছড়ালেও গরুর ক্ষেত্রে এটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগে আক্রান্ত গরু-বাছুর প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় ও এক পর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়। আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গার লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। গরু ঝিম মেরে থাকে ও কাঁপতে শুরু করে। কিডনির ওপর প্রভাব পড়ার ফলে গরু মারাও যায়। মশা ও মাছি এ ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসেবে দায়ী করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে খামারীরা ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। ক্ষুরা রোগের চেয়েও লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) ভয়ঙ্কর। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক খামারী গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে সচেতন খামারীরা দ্রুত প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন।

সম্প্রতি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আসা গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার পান্থাপাড়ার গরুর খামারী বুলেট মিয়া জানালেন, “এখানে এসে পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে আমার খামারের ৫-৬টি গরু এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে।”

শিবপুর ইউনিয়নের সরদারহাট গ্রামের বাসিন্দা শাহারুল ইসলামের আক্রান্ত দুটি বাছুর গরু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। সচেতনতা ও সময়োপযোগী চিকিৎসা গ্রহণের ফলে তার বাছুর দুটো রক্ষা পেয়েছে বলে তিনি জানান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ জানান, “লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ। সঠিক চিকিৎসায় আক্রান্ত গরু ভালো হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আক্রান্ত খামারীরা প্রাণিসম্পদ অফিসে এসে সেবা গ্রহণ করছেন। মাঠ কর্মী, ভেটেরিনারি সার্জন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা তাদের নানাভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি। লাম্পি প্রতিরোধে খামারে স্বাস্থ্য সচেতনতা অর্থাৎ মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণে মশারী ব্যবহার ও খোলামেলা জায়গায় গরু রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। এই রোগ হওয়ার আগেই গরুকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। আক্রান্তের পর ভ্যাকসিন দিলে তা ভালো হতে অনেক সময় লাগবে।”
 

মারিয়া

×