
ছবিঃ সংগৃহীত
দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করলেও আশানুরূপ ফল পায়নি এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। বরং, বিভিন্ন সময়ে নানা দাবি নিয়ে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামতে তাদের দেখা গেছে।
সবশেষ, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর সংস্কারের ঘোষণা দেয়, তখন নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সড়কে নামে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর, গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে তড়িঘড়ি করে ঢাবির সাথে সাত কলেজের সম্পর্কের অবসানের ঘোষণা দেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
তবে, দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে চূড়ান্তভাবে ঢাবির সাথে সাত কলেজের সম্পর্ক শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাবির ৫ম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের আর ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে না। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্মানজনক পৃথকীকরণের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা যায়, পৃথকীকরণের পর সাত কলেজের চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা এসব কলেজগুলোর জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোর অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হয়, তাহলে ঢাবি কর্তৃপক্ষ সে দায়িত্বশীলতা বজায় রাখবে।
এদিকে, সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)। গত ১৬ মার্চ নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাব করে ইউজিসি। ইতিমধ্যে ইউজিসির প্রস্তাবিত নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সাত কলেজ চলবে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে। চলতি মাসের শেষের দিকে ঘোষণা হবে এ প্রশাসনের কাঠামো।
রাজধানীতে সাত কলেজ মিলে যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তা বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে ইতিমধ্যে মতামত দিয়েছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তারা বলছেন, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ছিল যৌক্তিক। ভবিষ্যতে, এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি ভালোভাবে গঠন করা হয়, তাহলে এটি হতে পারে বিশ্বের বুকে একটি রোল মডেল।
এদিকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশায় স্বপ্ন বুনছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ শোষণের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন আর ভবিষ্যতে সাত কলেজকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান তারা।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, কিভাবে চলবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আর বর্তমান শিক্ষার্থীরা কি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পাবেন? এ নিয়ে জানতে চাইলে সাত কলেজ প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মুখপাত্র ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান জানান,
ইতিমধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীরা কিভাবে চলবে এবং ভবিষ্যতে কি হবে, তা স্পষ্টভাবে বুঝে গেছেন।
বর্তমান কোনো শিক্ষার্থী অধিভুক্তি নামক অভিশাপ মার্কা সার্টিফিকেট চায় না বলেই এতো বৃহৎ আন্দোলন হয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই সমাধান। কথা হচ্ছে, অতীতে অধিভুক্ত হওয়ার সময় মাস্টার্সে থাকা শিক্ষার্থীরাও ঢাবির Affiliated মার্কা সার্টিফিকেট পেয়েছিল। কাজেই ইউনিভার্সিটি ঘোষণা হলে, যে যেখানে থাকবে সেখান থেকেই সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফার করবে বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঢাবির কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম স্যার আমাদের বলেছিলেন, নতুন ইউনিভার্সিটি হলে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের মাধ্যমে এসব ট্রান্সফার করতে কোনো বাধা থাকে না।
তো সেক্ষেত্রে, এখানে ২৩-২৪, ২২-২৩, ২১-২২ আলাদা করে কোনো পরিচয় নেই! এমনকি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের আন্ডারে যে সেশন আসবে ২৪-২৫ তারও আলাদা পরিচয় নেই, সবাই সমান।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘোষণার পর প্রশাসন নিয়োগ হলে তাঁরা নিজস্ব নিয়ম মতো যাঁদের ভর্তি পরীক্ষা নিবে, তাঁদের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম চলবে। সেখানে বর্তমানদের মধ্যে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদেরও তাঁরা যুক্ত করে নিবে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের তাঁরা কিভাবে সর্বোচ্চ কোয়ালিটি নিশ্চিত করবে, একমাত্র তাঁরাই জানে। ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের কাজ নতুন প্রশাসন তৈরি করা। আমাদের কাজ প্রশাসন তৈরির আগ পর্যন্ত কথা বলে যাওয়া।
দ্রুত অধ্যাদেশ লাগবে বলে এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, সব কথার মূল কথা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ এবং অধ্যাদেশের পর দ্রুত ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে হবে। সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সাতটি কলেজ হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন।
মারিয়া