ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

এলজিইডি’র অবহেলায় সড়কের কাজে ধীরগতি, চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ

মো. খাইরুল ইসলাম, তালতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ১২:২২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১২:২৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

এলজিইডি’র অবহেলায় সড়কের কাজে ধীরগতি, চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ

ছবি: জনকণ্ঠ

 

দীর্ঘ ১০ মাস ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বরগুনার তালতলী উপজেলার বগীর হাট-তালতলীর বাঁধঘাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ। সড়কটি উপজেলার বৃহত্তম সড়ক এবং জেলার সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।

বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, যার কারণে বৃদ্ধ, শিশু, জীপগাড়ি, আলফা, মটরসাইকেল চালকদের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ব্যাপক বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা এলজিইডি’র অবহেলার কারণে প্রথম ধাপে এই প্রকল্পের সময় পার হলেও ২৫ শতাংশ কাজ এখনও শেষ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডি এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী গালিফ সত্তার এবং মীর সামসুদ্দিনের অবহেলার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ নিয়মিতভাবে করছে না। কয়েক দিন কাজ করে ফেলে রেখে চলে যায় এবং পরে কিছুদিন পর আবার আসেন। ফলে সড়কের উন্নয়ন কাজ মারাত্মক ধীরগতিতে চলতে থাকছে এবং জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে।

সড়কের কাজ শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি লোক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। কিছু দিন আগে দুই শিশু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া এই সড়কটি জেলা সদরের সাথে একমাত্র দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনসাধারণের নানা কাজে জেলায় আসা-যাওয়া করতে হয়। শিশু, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা ও শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে, কাজ শুরুর সময় ঠিকাদার নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে জানালেও তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ওই কাজের এক কিস্তির বিল ছাড় করেছেন।

স্থানীয় অটো, মটরসাইকেল চালকসহ অনেকে জানান, ‘গত বছরের শেষ দিকে মূল সড়কের দু’পাশ খুঁড়ে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করা হয়। সড়কের দু’পাশ খুঁড়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছিল। কয়েক মাস পর খোয়া-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করা হয়। এখন আবার জায়গায় জায়গায় ট্রাক্টর দিয়ে মূল সড়ক চাষ দেওয়া হয়েছে। সেখানে গর্ত হয়ে আছে, যা এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলাচলে অনেক কষ্ট হয়, তাই দুর্ঘটনা ঘটছে।’

স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতারা বলেন, ‘এই এলজিইডি কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এই সড়কের কাজের ধীরগতি। জনসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। আমরা দ্রুতই সড়কের কাজ বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বশিল উদ্দিন বলেন, ‘প্রকৌশলীদের কোনো অবহেলা নেই। আমাদের বিভিন্ন সময়ে চিঠি দিয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। শুরুর দিকে কিছু মেগাডাম দেওয়া হয়েছিল, যা একটু খারাপ ছিল। পরে পটুয়াখালী থেকে ভালো মেগাডাম এনে কাজ করা হচ্ছে। সরকার পতনের কারণে আমাদের কাজের কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো অবহেলা নেই। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণেই কাজের ধীরগতি হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ঐ ঠিকাদার কাজ শুরুর সময় কিছু নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে কাজ করেছেন, তবে আমরা চিঠি দিলে এখন ভালো মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছেন। এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের অন্য সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ রইল।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, ‘আমার কাছে এই সড়কের একাধিক অভিযোগ এসেছে। সেখানে দুইজন শিক্ষার্থী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশালে। আমি এই বিষয়ে জেলা মিটিংয়ে বারবার বলেছি। ওই দপ্তরের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে, কাজ দ্রুত করার জন্য। নয়তো তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য বলা হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে আমিও জেলায় মিটিংয়ে যাই। খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়।’


 

খাইরুল/ সুরাইয়া

×