ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

চার বছরেও শেষ হয়নি বানাতিবাজার গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

চার বছরেও শেষ হয়নি বানাতিবাজার গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ

ছবি: জনকণ্ঠ


পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বানাতিবাজার থেকে উত্তরদিকে শাখা নদীর উপরে মহল্লাপাড়াগামী গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ কার্যাদেশ দেওয়ার চার বছর পরেও শেষ হয়নি। গত তিন বছর ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। নেই ঠিকাদারের খোঁজ।
 

এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। এখনো ব্রিজটির দুই পাশের রেলিংসহ দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক করা হয়নি। গত চার বছরে এই ব্রিজটিতে ওঠানামা করতে গিয়ে শতাধিক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে মানুষ দায় ঠেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে এই পথে চলাচল করছেন। অথচ জনদুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার রয়েছেন।
 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কলাপাড়া উপজেলাসূত্রে জানা গেছে, ৪২ দশমিক ০৬ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজটির দুই দিকে ১৬৩ মিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। যার চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ৮ আগস্ট। মেসার্স শাহীল এন্টারপ্রাইজ ও মোহাম্মদ গিয়াস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজটি এই পর্যায়ে করে বছরের পর বছর ধরে লাপাত্তা। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পুরো কাজ আদায় না করে যতদূর কাজ করেছে তার বিল পরিশোধ করে দেয়। বাকি কাজ না করায় এখন এই ব্রিজটি সাধারণ মানুষের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। মানুষ যানবাহন নিয়ে ব্রিজে ওঠা-নামার সময় অহরহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন।

সংলগ্ন চায়ের দোকানি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজ থেকে যাত্রী নিয়ে টমটম নামার সময় উল্টে গিয়ে আমার দোকানের চুলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে।’
 

স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দিন জানান, ‘তিনি ব্রিজে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে কোমরে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। এখন স্বাভাবিক চলাচলে অনেক কষ্ট হয়।’
 

ক্ষুদে ব্যবসায়ী শামীম জানান, ‘এখানে ব্রিজে ওঠানামার সময় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। হয়তো যাত্রী নিয়ে হোন্ডা, টমটম বা অটো কেউ না কেউ উল্টে পড়ছে। খালি হেঁটে নামতে গিয়েও বহু মহিলা আহত হয়েছেন।’ 

অটো, ভ্যান ও ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালকরা জানান, ‘মহল্লাপাড়া আবাসনগামী এলাকা ও শের-ই-বাংলা নৌঘাটের দিকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই অসম্পন্ন ব্রিজটি দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। বৃদ্ধ ও নারী-শিশুদের ভোগান্তি চরমে।’
 

লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, ‘এই ব্রিজটির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে উপজেলা পরিষদের মিটিং-এ বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু এলজিইডি ডিপার্টমেন্ট এখন পর্যন্ত কিছু করেনি। এখান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতি বছর অন্তত ৩০-৩৫ জন মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন। গত তিন-চার বছর ধরে ঠিকাদার কাজ এভাবে বন্ধ করে রাখছে। এরপর ঠিকাদার লাপাত্তা।’
 

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গিয়াস উদ্দিনকে মোবাইল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
 

কলাপাড়া উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন জানান, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বহুবার শোকজ করা হয়েছে। তবে শীঘ্রই বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।’

 


 

মাননু/ সুরাইয়া

×