ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

মহেশখালীতে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন: বেশি টোল নিলে ইজারা বাতিলের হুঁশিয়ারি নৌপরিবহণ উপদেষ্টার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৪ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৯, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

মহেশখালীতে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন: বেশি টোল নিলে ইজারা বাতিলের হুঁশিয়ারি নৌপরিবহণ উপদেষ্টার

ছবি: জনকণ্ঠ

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে বহুল প্রত্যাশিত সি-ট্রাক সার্ভিস চালু হয়েছে। বৃহস্পতিবার মহেশখালীর নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটি ঘাটে সেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহণ উপদেষ্টা এম শাখাওয়াত হোসেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পাঁচ টাকার বেশি টোল নেওয়া হলে ইজারা বাতিল করা হবে। একই ব্যক্তি যাতে বছরের পর বছর ইজারা না নিতে পারে, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। তবে ইজারা প্রথা বদলাতে গিয়ে মামলায় পড়তে হচ্ছে। মামলাগুলো শেষ হলে সরকার একটি প্রক্রিয়ায় যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ যদি উন্নয়ন না পায়, তাহলে ঢাকায় মেট্রোরেল চালিয়ে লাভ কী? উন্নয়ন করতে চাই, কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থে করা মামলাগুলো তাতে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।” এ সময় তিনি বরিশাল ও মহেশখালীর মানুষকে “মামলাবাজ” বলেও মন্তব্য করেন।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহেশখালীর কৃতি সন্তান বিশ্ববরেণ্য চিন্তক ও গবেষক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, যিনি নিজেও মহেশখালীর সন্তান। তিনি বলেন, “গত ২০ বছরে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখন সি-ট্রাক চালু হওয়ায় আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা হলো। তবে সব সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি।”

তিনি ১৯৯১ সালের কথা স্মরণ করে বলেন, “তৎকালীন সচিব মোকাম্মেল হক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার দরিদ্র মানুষের কথা ভেবে মহেশখালী ঘাটের টোল তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন নানা অজুহাতে কখনো পৌরসভা, কখনো জেলা পরিষদের নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। জনগণ চাইলে এই টোল আবার বাতিল হতে পারে। বিগত ৩০ বছর ধরে মাফিয়া স্টাইলে একটি সিন্ডিকেট ঘাটে নৈরাজ্য চালিয়েছিলো। সাবেক এমপি আশেক উল্লাহ রফিকও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো। সে কখনো ঘাট নিয়ে কোন কথা বলেনি।"

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজা উদ্দিন বলেন, “অতীতে বর্ষায় উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কাঠের নৌকা, গামবোট বা স্পিডবোটে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হতো। একটি প্রভাবশালী মাফিয়া সিন্ডিকেট এসব নিয়ন্ত্রণ করত। এখন সি-ট্রাক চালু হওয়ায় এই দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমবে বলে আশা করছি।”

 

সাংবাদিক এসএম রুবেল বলেন, “মহেশখালী ঘাট দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দখলদারিত্ব ও রাজনৈতিক ক্ষমতার খেলায় জিম্মি ছিল। যাতায়াতে হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া, মারধর ও অপমান ছিল সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘাটের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত একটি প্রভাবশালী পরিবারের হাতে, যারা দল বদলালেও শোষণের ধারা বদলায়নি। আজ জনগণের প্রতিরোধে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলেও স্থায়ী সমাধান আনতে হলে ঘাটের ইজারা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এবং কমমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ'কে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।"

 

এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান মো. সলিমুল্লাহ, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, পুলিশ সুপার সাইফউদ্দীন শাহীন, মহেশখালীর সন্তান সরকারের যুগ্ম সচিব আবুল হাশেম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো:হেদায়েত উল্যাহ্, মহেশখালী উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনসহ ঘাটের অব্যবস্থাপনার আন্দোলনের সকল স্টেকহোল্ডারও  স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রবিউল হাসান

×