
ছবি : সংগৃহীত
কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ সদস্য জুয়েল চেক জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৮ মার্চ সংঘটিত এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ওসি বিষয়টি গোপন রাখতে চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ কয়েকজন পুলিশের।
জানা গেছে, পুলিশ সদস্য জুয়েল স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সোনালি ব্যাংক থেকে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং এরপর থানার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যান। এদিকে, ঈদের আগে মামলার তদন্ত ব্যয় না পাওয়ায় থানায় কর্মরত অনেক পুলিশ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই দাবি করছেন, ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন এবং পালিয়ে যাওয়া ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা ও আত্মসাতের টাকার পরিমাণ কত জানতে চাইলে প্রতিবেদকের কাছে তথ্য সরবরাহে গোপনীয়তা বজায় রাখতে চেষ্টা করছেন জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পুলিশ সদস্য জুয়েল একটি চেকের মাধ্যমে সরকারি তহবিলের তথাকথিত অর্থ গ্রহণ করেন এবং পরে আর কয়েকটি চেক জাল প্রতিস্থাপন করে টাকা সরিয়ে নেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে ওসি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
পুলিশের আরেকটি সূত্র বলছে, কনস্টেবল জুয়েল থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের আস্থা ভাজন হওয়ার কারনে থানার অর্থ পরিচালনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করত। থানার টাকা-পয়সা হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেকেন্ড অফিসারের হওয়ার কথা থাকলেও জুয়েলকে সব দায়িত্ব দেওয়ার কারণে তাদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তদন্ত ব্যয় ও অফিস সামগ্রী ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তুলে নেয়। তার এই জালিয়াতি প্রায় কয়েক লাখ টাকার হতে পারে এবং সে এই ঘটনাটি ঘটানোর পর থেকে পালিয়ে গেছে। যা থানার জন্য একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে।
পুলিশের ওই সূত্র বলছেন, সরকারের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ একটি গুরুতর বিষয়। সাধারণত এই ধরনের অভিযোগগুলো পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরে দুর্নীতি বা অনিয়মের ইঙ্গিত দেয়। যদি পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি তহবিলের অপব্যবহার বা অবহেলার অভিযোগ উঠে তাহলে এটি তদন্তের বিষয় হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই তদন্ত পরিচালনা করে। তবে এখনও পর্যন্ত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সততা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, তদন্ত করে যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হয় ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘঠতে পারে।
দুই পুলিশ কনস্টেবলের দাবি, জুয়েল শুধু সরকারী টাকা আত্মসাত করেনি তাদের টাকাও চুরি করেছে। তাদের মাটির ব্যাংকে জমানো লাখ টাকাও নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
অবসর প্রাপ্ত এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যদি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারি তহবিলের অপব্যবহার বা অবহেলার অভিযোগ উঠে, তাহলে এটি তদন্তের বিষয় হয়। এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই তদন্ত পরিচালনা করে। তারা চাইলে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যা সাময়িক বরখাস্ত থেকে শুরু করে গুরুতর শাস্তিও হতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস খানকে উপর্যুপরি ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সিন করে কোন উত্তর দেননি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন জানান, জুয়েল নামের এক পুলিশ চলে গেছে বলে জেনেছি। ওসি ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে গরহাজির নোটিশ পাঠিয়েছে। ৬০ কার্যদিবস যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আঁখি