
মিছিলে মিছিলে উত্তাল কুয়েট
শিক্ষা উপদেষ্টা ডক্টর সি আর আবরারের সঙ্গে আলোচনার পরও আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি আন্দোলনরত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এদিকে, কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, খুলে দেওয়া হয়েছে কুয়েটের বিভিন্ন আবাসিক হল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার কুয়েটে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভেঙে আইনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি এ সময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে, শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে কফিন মিছিল বের করেন। স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে মিছিলটি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা ভিসির অপসারণে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একইসঙ্গে তারা জানান, ভিসি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে, বুধবার দুপুরে সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০১তম জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলপ্রকার একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা এবং ২ মে আবাসিক হলসমূহ খোলার বিষয়ে বলা হয়। কিন্তু বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ২ মের পরিবর্তে বুধবার বিকেলেই খুলে দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ এবং ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে, কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনা করতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধিদল। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তনজিমউদ্দীন খান, বুয়েট অধ্যাপক সাইদুর রহমান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব আহমেদ শিবলী।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা প্রথমেই অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা চালিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে অনশন থেকে সরিয়ে আনতে সফল হন। অন্য শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যেতে দৃঢ় থাকেন। পরে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর সংঘটিত হামলা, তাদের আন্দোলন ও দাবিগুলো তুলে ধরেন।
অপরদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দোষী প্রমাণিত না হলে চাপ প্রয়োগ করে ভিসির অপসারণ মেনে নেবে না শিক্ষক সমিতি। তারা বলেন, ছাত্রদের ওপর আক্রমণ ও শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের যথোপযুক্ত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এতে আমরা ব্যথিত। অল্প কয়েকজন ছাত্র মিলে মিছিল করলেও বলা হচ্ছে, কুয়েট উত্তাল, অথচ কুয়েটে শিক্ষার্থী ৫ হাজারেরও বেশি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রাজনৈতিক ট্যাগ দিচ্ছে, যা দুঃখজনক। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর করেছে। কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন, তাদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। শিক্ষকরা এসবের বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন, অধ্যাপক ড. আশরাফুল গণি ভুঁইয়া প্রমুখ।
এ ছাড়া, বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্রীদের দাবির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীরা। তারা জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় তাদেরকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সেই ঘটনায় তারা দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।