ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

পনেরো গ্রামের মানুষ মুখোমুখি

দশানী নদীর বুকে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ

সংবাদদাতা, বকশীগঞ্জ, জামালপুর

প্রকাশিত: ২২:২৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

দশানী নদীর বুকে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ

মেরুরচর ইউনিয়নে দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ

বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নে ও পার্শ্ববর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা দশানী নদীটি। আর এ বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ বাঁধ নির্মাণের পক্ষে বিপক্ষে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন।
এ কারণে নদী ভাঙনের কবলে পরেছে ১১টি গ্রামের মানুষ। মাদারেরচর খাপরাপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী ঘুঘরাকান্দি, চর আইরমারী, মুন্দিপাড়া, মুন্সিপাড়া, কলকিহারা ও বাঘাডুবা গ্রামের মানুষ দশানী নদীর ভাঙন রোধে ওই নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে।  খাপড়াপাড়া নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এবং নদী ভাঙনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানোর পরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় খাপড়াপাড়া গ্রামের মানুষ নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে ওই নদীর মাঝখানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। 
মাদারেরচর খাপড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আখতারুজ্জামান জানান, এই নদী ভাঙন রোধে অনুদান চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। জিও ব্যাগ ও ব্লক ব্যবহার করে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু কোনো দপ্তরই আমাদের কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি। ইতোমধ্যে আমাদের গ্রামে ২০-২৫টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগা মাঠ, কবরস্থানসহ প্রায় সহ¯্র্রাধিক হেক্টর কৃষিজমি  নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নদী ভাঙনের ফলে রাস্তাঘাট না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তাঘাট না থাকায় ছেলে-মেয়েদের বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে ভালো কোনো সম্বন্ধও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছি। স্ব-উদ্যোগে বাঁধ দেওয়ার ফলে আইরমারী মরারপাড়া গ্রামের মানুষ আমাদের সঙ্গে হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করে তারাও দশানী নদীতে পাল্টা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।

অপরদিকে ওই নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে বকশীগঞ্জ উপজেলায় মেরুরচর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ খাপড়াপাড়ায় নদীর বুকে নির্মিত  বাঁধ অপসারণের দাবি জানান। খাপড়াপাড়ায় নদীতে কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করার ফলে নদীর পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন করায় ওই বাঁধ অপসারণের দাবি জানান বকশীগঞ্জ উপজেলার কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। 
দেওয়ানগঞ্জ এবং বকশীগঞ্জ এই দুই উপজেলার মানুষ এখন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। উভয় উপজেলার মানুষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে যে কোনো সময় সংঘর্ষের  আশঙ্কা করছেন অনেকেই। জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী  প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত না করেই খাপড়াপাড়ায় দশানি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন বিষয়টি মনিটরিং করছে যে কোনো সময় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, বিষয়টি যেহেতু দুই উপজেলার ঘটনা তাই জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×