ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

যমুনা সার কারখানার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সরিষাবাড়ী, জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

যমুনা সার কারখানার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি: জনকণ্ঠ

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন) মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় শাস্তিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল-মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মমিনুল ইসলাম। তিনি গত ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার অভিযোগটি দাখিল করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোঃ দেলোয়ার হোসেন গত ৮-৯ বছর ধরে যমুনা সার কারখানায় কর্মরত থেকে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের কয়েক কোটি টাকা তৎকালীন সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া, স্থানীয় কিছু অসাধু ঠিকাদারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে প্রতি মাসে ভুয়া বিল/ভাউচারের মাধ্যমে কারখানার ফান্ড থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

সম্প্রতি যমুনা সার কারখানার বিভিন্ন বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে আহ্বান করা এই দরপত্রে ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে কারিগরি মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য ছিল দুটি, মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজ এবং আল-মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড।

অভিযোগ রয়েছে, মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলেও, ১০ লাখ টাকা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে, কেন্দ্রীয় ক্রয় প্রযুক্তি ইউনিটের (সিপিটিইউ), বর্তমান নাম বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরটি (বিপিপিএ), ২০১৯ সালের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করেন দেলোয়ার হোসেন।

এ নিয়ে আল-মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৫৬ অনুযায়ী রিভিউ প্যানেলে আপিল করে। ২ মার্চ বিপিপিএ রিভিউ বোর্ড দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রায় দুই মাস পর দেলোয়ার হোসেন দরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করেন এবং ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিংয়ে আল-মমিন আউটসোর্সিং এর নামে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, পরবর্তীতে এই বোর্ড মিটিংয়ের গোপন তথ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিকাদার মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ রাশেদুজ্জামান লিটনকে সরবরাহ করে, এবং তার সহযোগিতায় আল-মমিন আউটসোর্সিং এর বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এবং বিধিমালা ২০০৮-এর ধারা ৫৬ ও ৫৭ লঙ্ঘন করে দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগকারীর দাবি।

এ বিষয়ে মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। দরপত্রে অনিয়ম করতে না পেরে এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে সহযোগিতা করছেন। তাই আমি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সালেহ মোহা. মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন।

 


 

মশিউর/ সুরাইয়া

×