
ছবি : সংগৃহীত
চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি অত্যাধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার-স্পেশাল হাসপাতালে চার হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে এই সেন্টারটি স্থাপন করা হচ্ছে। চীন থেকে দুইটি বিশেষজ্ঞ দল এক বছর মেয়াদে বাংলাদেশে এসে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে। ইতোমধ্যে কিছু অত্যাধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন যন্ত্রপাতি দেশে পৌঁছেছে এবং আরও কিছু আসার পথে রয়েছে। প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হলেও আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। এই সেন্টার চালু হলে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক রোবটিক চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অর্থায়ন করলেও চীনের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চীন সরকার প্রায় বিশ কোটি টাকা মূল্যের রোবটিক যন্ত্রপাতি উপহার হিসেবে প্রদান করেছে। সেন্টারটি পরিচালিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রকল্প পরিচালক এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সমন্বিত তত্ত্বাবধানে। ইতোমধ্যে একটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে যা সেন্টারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক ও যোগাযোগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করবে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা থেকে এই সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই আন্দোলনে আহত মোট ৬৫৫ জন রোগী বিএমইউ-এর বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এই সেন্টার চালু হলে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেবা পাওয়া সম্ভব হবে, যা বিদেশে রোগী পাঠাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি ভারতের উপর চিকিৎসা নির্ভরতা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
প্রাথমিকভাবে আন্দোলনে আহতদের জন্য এই সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হলেও নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে অন্যান্য রোগীরাও এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছেন যে চীনের আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক এই সেবা অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও কার্যকর হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অত্যধিক রোগী চাপ, যেখানে একজন চিকিৎসককে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জন রোগী দেখতে হয়। এই সেন্টারের মাধ্যমে আরও উন্নত ও মানসম্মত সেবা প্রদান সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে এবং দেশের নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেবা নিশ্চিত করবে।
আঁখি