ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

রায়পুর পৌরসভায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র পানির সংকট: চরম ভোগান্তিতে পৌরবাসী

প্রদীপ কুমার রায় নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।

প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৯:০১, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

রায়পুর পৌরসভায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র পানির সংকট: চরম ভোগান্তিতে পৌরবাসী

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভায় গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছেন কিংবা অতিরিক্ত খরচ করে মিনারেল ওয়াটার কিনছেন। গরমের তীব্রতা, পানির স্তর নেমে যাওয়া, বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ ও লোডশেডিং মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

রায়পুর পৌরসভার তথ্য মতে, পৌর এলাকায় নিবন্ধিত পানির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৫ লাখ লিটার হলেও, বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের কারণে প্রতিদিন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ৭-৮ লাখ লিটার পানি। ফলে বেশিরভাগ মানুষই পানির জন্য নির্ভর করছেন বিকল্প উৎসের উপর।

পৌরসভার ওয়াটার সুপার প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন,“গরমের কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। অপরদিকে, বিদ্যুতের ভোল্টেজ ৪২০-এর পরিবর্তে দীর্ঘদিন ৩৬০-৩৭০-এর মধ্যে রয়েছে। এই ভোল্টেজে পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে না।”

রায়পুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. মোশারেফ হোসেন বলেন,“লো-ভোল্টেজের কারণে সমস্যা হচ্ছে-এটা আমরা জানি। কিন্তু আমরা নিজেরাও সীমাবদ্ধতার মধ্যে আছি। কিছু করার সুযোগ আপাতত নেই।”

এই অবস্থায়, পৌরবাসীরা একদিকে যেমন অতিরিক্ত খরচে মিনারেল ওয়াটার কিনে জীবনধারণ করছেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও পড়ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টিউবওয়েলের পানি অনেক সময় আয়রন ও ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত থাকে। ফলে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পীর বাড়ি এলাকার গৃহবধূ প্রীতি কনা রায় বলেন,“সময়মতো পানির বিল পরিশোধ করছি, কিন্তু পানি পাচ্ছি না। রান্না, ধোয়া-মোছা সবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।”

পশ্চিম কাঞ্চনপুরের বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর তোফাজ্জল আলী স্বপন বলেন,“পানি নেই কয়েকদিন ধরে। অথচ পৌর প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই। ইউএনও দায়িত্বে থাকলেও মনে হয় তিনি অবগত নন।”

রায়পুর পৌরসভা বর্তমানে প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হলেও সংকট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। স্থানীয়রা বলেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যিই বিষয়টি জানলে অবহেলা আছে তা খুঁজে বের করতেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরণের পরিকল্পনা প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে-জেনারেটর চালিত পাম্প স্থাপন করে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, এবং দীর্ঘমেয়াদে—ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পাইপলাইন উন্নয়ন জরুরি বলে মত দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ।

রায়পুর পৌরসভার পানির এই সংকট কেবল একটি প্রযুক্তিগত বা প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি এখন একটি মানবিক সংকট। অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

আফরোজা

×