ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

‘জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার’

যশোরের দুঃখ ‘ভবদহ এলাকা’ পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

যশোরের দুঃখ ‘ভবদহ এলাকা’ পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা

‘ভবদহ এলাকা’ পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা

যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ জলাবদ্ধতার সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চল পরিদর্শনকালে এ কথা জানান জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা একসঙ্গে এই অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবগণও উপস্থিত ছিলেন। 
মঙ্গলবার দুপুরে পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফ করেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, গতবারের মতো এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এই এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ভিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে  কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। 
এরপর তারা এই অঞ্চলের ধান খেত পরিদর্শন করেন। এর আগে থেকে ভবদহ পাড়ের মানুষরা ভবদহ স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি দাওয়া সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এ সময় তারা দ্রুত টিআরএম চালুসহ স্থানীয় নদীগুলো খনন করার দাবি জানান। 
জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে, বর্ষা মৌসুমে উজানের পানি এইসব নদী দিয়ে নামতে পারে না। ফলে, নদী উপচে সেই পানি বিল-মাঠ ছাপিয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি।

জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বরাদ্দের অর্থের সিংহভাগ লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।

আরো পড়ুন  

×