
কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট জুলাই থেকে
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু করার জন্য ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর, জুলাই মাস থেকেই কক্সবাজার বিমানবন্দর বাংলাদেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে।
সিএএবির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সোমবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও এয়ারলাইন অপারেটর কমিটির প্রতিনিধিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডাররা
উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সিএএবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জুলাই মাসে কক্সবাজার থেকে স্বল্প পাল্লার বিমানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুট চালু করার জন্য বিমানকে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর করা ২০২১ সালে শুরু হওয়া একটি ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যমান রানওয়ে সম্প্রসারণ ও একটি নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা সার্বক্ষণিক বিমান চলাচলে সক্ষম হবে। সিএএবি কর্মকর্তারা জানান, জুলাইয়ের মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ (বঙ্গোপসাগরে নির্মিত অতিরিক্ত ১,৭০০ ফুট) সম্পন্ন হবে। এর ফলে, মোট রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০,৭০০ ফুট (৩.২৬ কি.মি.) হবে। সম্পন্ন হলে এটি হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম রানওয়ে।
প্রাথমিকভাবে বর্তমান টার্মিনাল ভবন থেকে অ্যাডহক ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। নতুন অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক টার্মিনালটি পরবর্তী সময়ে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এটি সকল ধরনের প্রশান্ত বিমান পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
সিএএবি চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির বলেন, ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে আমরা রানওয়ে, আলোক ব্যবস্থা, সুরক্ষা বাঁধ ও টার্মিনাল অবকাঠামো ক্রমাগত পরিদর্শন করছি।’
সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো, কক্সবাজারকে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের মতো একটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের (বিটিবি) কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে, উন্নত বিমান যোগাযোগ উপকূলীয় শহরটিকে আঞ্চলিক পর্যটনের জন্য একটি কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে স্থান দেবে। একটি আঞ্চলিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে চীনের ইউনান প্রদেশ কুনমিং ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। স্থলবেষ্টিত প্রদেশটি কক্সবাজারকে এর পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেখছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিওএবি) সভাপতি রাফিউজ্জামান এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘কক্সবাজারে নেপাল, ভুটান, উজবেকিস্তান ও চীনের ইউনান প্রদেশের মতো স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর পর্যটকদের আকর্ষণ করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এটি তাদের সবচেয়ে কাছের সমুদ্র উপকূল।’
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের সঙ্গে কাঠমান্ডু, থিম্পু ও কুনমিংয়ের সরাসরি সপ্তাহান্তের বিমান চলাচল পর্যটকদের আগমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সেবা প্রদানের জন্য শহরে এখনও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বিনোদনের অভাব রয়েছে বলে রাফিউজ্জামান মনে করেন। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারকে একটি স্বতন্ত্র বৈশ্বিক গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারকে বিদেশী পর্যটন-বান্ধব অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং বিনোদনমূলক ও নাইটলাইফ প্রস্তাবগুলো সম্প্রসারণ করতে হবে।’